ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সাবেক অধিনায়ক কাজ করছেন মাছ বাজারে, জীবন সংগ্রামের এক জীবন্ত গল্প

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ ডিসেম্বর ০৩ ১৭:০২:১২
সাবেক অধিনায়ক কাজ করছেন মাছ বাজারে, জীবন সংগ্রামের এক জীবন্ত গল্প

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মধ্যে যখন মাশরাফী, সাকিবরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে বড় বড় ম্যাচে জয় লাভ করছে, তখন আরেক ক্রিকেটার, যিনি দেশের হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, মাছ বাজারে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি হলেন আলম খান, যিনি এক সময় বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন।

বরিশাল শহরের বাসিন্দা আলম খান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও দেশ ও বিদেশে ১১টি ম্যাচ খেলেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল ৭টি ম্যাচে জয় লাভ করেছে। তবে জীবন সংগ্রামে এত সাফল্যের পরও, আলম খানের বর্তমান অবস্থা খুবই কঠিন। ৩১ বছর বয়সী এই যুবক এখন বরিশালের পোর্ট রোডে একটি মাছের আড়তে কাজ করে সংসারের হাল ধরছেন। যদিও তার এক সময়ের শখ ছিল ক্রিকেট খেলা, তবে দারিদ্র্য তাকে বাধ্য করেছে জীবিকা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে।

আলমের জীবনের গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। তিনি ১৯৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তার পা দুটি বাঁকা হয়ে যায় এবং শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। তার বাবাও সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, তবে ২০১৮ সালে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে আলমের ওপর। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও আলম তার পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে নিজের জীবনে অন্ধকারকে ছড়িয়ে দেন এবং অনেক কষ্টে বরিশালে একটি মাছের আড়তে কাজ পান।

আলম খানের জীবনের অন্যতম দুঃখের বিষয় হলো, শৈশবে ক্রিকেট খেলার প্রতি তার আগ্রহ ছিল, তবে এর জন্য তাকে অনেক সময় তার বাবার হাতে পিটুনি খেতে হয়েছে। যদিও তার মা তাকে লুকিয়ে ক্রিকেট খেলার জন্য টাকা দিতেন। ২০১৫ সালে জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের গঠনের সময় আলমের জীবন এক নতুন মোড় নেয়। সারা দেশের ১৫৬ জন ক্রিকেটারের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে তিনি চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা পান এবং এরপর দলের অধিনায়ক পদে আসীন হন। তিনি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

তবে জীবন ও ক্যারিয়ারে একাধিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আলম কোনো দিন ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা হারাননি। তার জীবনের সংগ্রাম ও সফলতার চিত্রটি সমাজে দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধিতা এবং কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হিসেবে রয়ে গেছে।

তার স্বপ্ন ছিল একদিন বাবা-মাকে ভালোভাবে খাওয়াবেন এবং তাদের কষ্টের প্রতিফলন হিসেবে সুখী জীবন দেবেন, তবে তা সম্ভব হয়নি। বাবা-মা দুজনেই মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে আলম তার স্ত্রী, ছোট ভাই, এবং মামাতো ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে জীবনযাপন করছেন, তবে তার সংগ্রাম এবং ক্রিকেটের প্রতি অটুট ভালোবাসা তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আলম খানের জীবন সবার জন্যই একটি বড় শিক্ষা। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, দারিদ্র্য বা অন্য যে কোনো বাধাই তার জন্য ক্রিকেটকে ভালোবাসা এবং সফলতা অর্জনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে