ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা বন্ধের ঘোষণা দিল ভারত

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ নভেম্বর ৩০ ১৮:১৭:৫৯
বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা বন্ধের ঘোষণা দিল ভারত

ভারতের জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগের জেরে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন কলকাতার কিছু চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতাল। এ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। তবে এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মানবিক বার্তা দিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা বন্ধের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ফিরহাদ হাকিম বলেন,

“বাংলাদেশে বর্তমানে অরাজকতা চলছে, এজন্য হয়তো অনেক রোগী আসতে পারছেন না। কিন্তু বৈধ পথে এসে কেউ চিকিৎসা পাননি—এমন খবর আমার কাছে নেই। চিকিৎসকের ধর্ম হলো মানবসেবা। কোনো রোগী যদি অসুস্থ হয়, তিনি শত্রু হলেও তাকে সুস্থ করা চিকিৎসকের দায়িত্ব। মানবিকতার জায়গায় কোনো প্রশ্ন তোলা উচিত নয়।”

তিনি আরও যোগ করেন, কেউ ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা করা বন্ধ রাখতে পারেন, তবে মানবিক দিক থেকে এটি সঠিক নয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের পতাকার অবমাননার অভিযোগ উঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (আরএসটিইউ), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসটিইউ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডিইউ) টিএসসি এলাকা, এবং বুয়েট ক্যাম্পাসে ভারতের জাতীয় পতাকার নকশা মাটিতে আঁকা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে হেঁটে প্রতিবাদ জানানো হয়।

এমন ঘটনার সূত্র ধরে খ্যাতনামা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইন্দ্রনীল সাহা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি রোগী দেখা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি উত্তর কলকাতার মানিকতলার একটি বেসরকারি হাসপাতালও বাংলাদেশি রোগীদের ভর্তি না করার সিদ্ধান্ত জানায়।

বিরোধী দল বিজেপির নেতারা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশি রোগীদের বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিষয়টি নিয়ে সরব হন এবং বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়ার পক্ষে মত দেন।

সম্প্রতি ইসকন ইস্যুতে নতুন করে ভারতের পতাকার সঙ্গে ইসরাইলের পতাকা মাটিতে আঁকা এবং তা ঘৃণা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পদদলিত করার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে শুধু ইসরাইলের পতাকার ওপর প্রতিবাদ দেখানো হলেও এবার ভারতের পতাকাও যুক্ত হওয়ায় ভারতের নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।

বিতর্কের মধ্যেই ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য শান্তি ও সহিষ্ণুতার বার্তা দেয়। তিনি বলেন,

“মানবসেবা হচ্ছে চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব। কোনো রোগী যদি আমাদের কাছে আসে, আমরা তাকে ফিরিয়ে দিতে পারি না। একে রাজনীতির সঙ্গে মেশানো উচিত নয়।”

বাংলাদেশি রোগীরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আসছেন। বিশেষত কলকাতা এবং দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালগুলো তাদের জন্য অন্যতম ভরসার জায়গা। তবে সম্প্রতি তৈরি হওয়া এই পরিস্থিতি রোগীদের জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, রাজনীতি ও বিরোধের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিকতা বজায় রাখা হবে। চিকিৎসা কখনো রাজনীতির বলি হতে পারে না—এটাই সবার আশা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে