ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কাজা নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম, যা বলে গেছেন আমাদের প্রিয় নবি

২০২৪ নভেম্বর ২৮ ১০:৩৬:০১
কাজা নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম, যা বলে গেছেন আমাদের প্রিয় নবি

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক। যদি কেউ ভুলে যান বা ঘুমিয়ে পড়েন এবং নামাজের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায়, তবে যখনই তা মনে পড়বে বা জেগে উঠবেন, তখনই সেই নামাজ কাজা করা জরুরি। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।

উত্তম আমল কোনটি? এমন প্রশ্নের জবাবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ পড়া অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে নামাজ আদায় করাই হলো সর্বোত্তম আমল। তারপরও বিভিন্ন কারণে মানুষের নামাজ ছুটে যায়। নামাজ ছুটে গেলে পরবর্তীতে তা কাজা করতে হয়।

প্রিয় নবি (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন নামাজ পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে তার কাফ্ফারা হল স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া।” অন্য এক বর্ণনায় বলেন, “এ ছাড়া তার আর কোন কাফ্ফারা (প্রায়শ্চিত্ত) নেই।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬০৩ নং)

তিন আরো বলেন, “নিদ্রা অবস্থায় কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তো জাগ্রত অবস্থায় হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন নামাজ পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার উচিত, স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া। কেন না, আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামাজ কায়েম কর।” (কুরআন মাজীদ ২০/১৪, মুসলিম, মিশকাত ৬০৪নং)

অতএব কাজা নামাজ পড়ার জন্য কোন সময়-অসময় নেই। দিবা-রাত্রের যে কোনো সময়ে চেতন হলে বা মনে পড়লেই উঠে সর্বাগ্রে নামাজ পড়ে নেওয়া জরুরি। অন্যথা পরবর্তী সময়ের অপেক্ষা বৈধ নয়।

বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দিলে বা সুযোগ ও সময় থাকা সত্ত্বেও না পড়ে অন্য ওয়াক্ত এসে গেলে পাপ তো হবেই; পরন্তু সে নামাজের আর কাজা নেই। পড়লেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। বিনা ওজরে যথাসময়ে নামাজ না পড়ে অন্য সময়ে কাজা পড়ায় কোনো লাভ নেই। বরং যে ব্যক্তি এমন করে ফেলেছে তার উচিত, বিশুদ্ধচিত্তে তওবা করা এবং তারপর যথাসময়ে নামাজ পড়ায় যত্নবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নফল নামাজ বেশি বেশি করে পড়া। (মিশকাত ৬০৩ নং হাদিসের আলবানীর টীকা দ্র.)

কেউ অজ্ঞান থাকলে জ্ঞান ফেরার পূর্বের নামাজ কাজা পড়তে হবে না। কারণ, সে জ্ঞানহীন পাগলের পর্যায়ভুক্ত। আর পাগলের পাপ-পুণ্য কিছু নেই। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৩২৮৭ নং) ইবনে উমার (রা.) অজ্ঞান অবস্থায় কোন নামাজ ত্যাগ করলে তা আর কাজা পড়তেন না। (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪১)

অবশ্য নামাজ পড়তে পারত এমন সময়ের পর অজ্ঞান হলে জ্ঞান ফেরার পর সেই সময়ের নামাজ কাজা পড়া জরুরি। (আলমুমতে’, শারহে ফিকাহ, ইবনে উষাইমীন ২/১২৬-১২৭)

পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি যদি কোন কারণে কোন বস্তু ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় বেহুঁশ হয়, তাহলে তার জন্য কাজা পড়া জরুরি। (ঐ ২/১৮)

কাজা নামাজ পড়ার জন্য আযান ও ইকামত বিধেয়। কয়েক ওয়াক্তের নামাজ কাজা পড়তে হলে, প্রথমবার আযান ও তারপর প্রত্যেক নামাজের জন্য পূর্বে ইকামত বলা কর্তব্য।

এক সফরে আল্লাহর রসূল (সা.)-সহ সাহাবাগণ ঘুমিয়ে পড়লে ফজরের নামাজ ছুটে যায়। তাদের চেতন হয় সূর্য ওঠার পর। অতঃপর একটু সরে গিয়ে তারা অযু করেন। বিলাল (রা.) আযান দেন। (মুসলিম, সহিহ ৬৮১, আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান) অতঃপর সুন্নত কাজা পড়ে ইকামত দিয়ে ফজরের ফরজ কাজা পড়েন। (বুখারী ৩৪৪)

খন্দকের যুদ্ধের সময় মহানবী (সা.) ও সাহাবাগণের চার ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেলে গভীর রাত্রিতে তিনি বিলাল (রা.)-কে আযান দিতে আদেশ করেন। (শাফেয়ী, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহিহ, ইবনে হিব্বান, সহিহ) অতঃপর প্রত্যেক নামাজের পূর্বে ইকামত দিতে বলেন। এইভাবে প্রথমে যোহর, অতঃপর আসর, মাগরিব ও এশার নামাজ পরপর কাজা পড়েন। (নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী প্রমুখ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানি ১/২৫৭)

উল্লেখ্য যে, ফজরের আযান দিনে দিতে হলেও ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” বলতে হবে। কারণ ফজরের ঐ কাজা নামাজে মহানবী (সা.) ফজরের সময় যা করেন, দিনেও তাই করে নামাজ আদায় করেছেন বলে প্রমাণ আছে। (মুসলিম, সহীহ ৬৮১নং

যে নামাজ যে অবস্থায় কাযা হয়, সেই নামাজকে সেই অবস্থা ও আকারে পড়া জরুরি। সুতরাং রাতের নামাজ দিনে কাজা পড়ার সুযোগ হলে রাতের মতই করে জোরে ক্বিরাআত করতে হবে। কারণ, মহানবী (সা.) যখন ফজরের নামাজ দিনে কাজা পড়েছিলেন, তখন ঠিক সেই রুপই পড়েছিলেন, যে-রূপ প্রত্যেক দিন ফজরের সময় পড়তেন। (মুসলিম, সহিহ ৬৮১নং) তেমনি ছুটে যাওয়া নামাজ রাতে কাজা পড়ার সুযোগ হলে দিনের মতই চুপে চুপে ক্বিরাআত পড়তে হবে। (নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/২৭, আলমুমতে’, শারহে ফিকাহ, ইবনে উষাইমীন ৪/২০৪, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সউদি উলামা-কমিটি ১/৩১০)

তেমনি কেউ মুসাফির অবস্থায় নামাজ কাজা করে বাড়ি ফিরলে, বাড়ি ফিরার পর নামাজ কসর করে না পড়ে পুরোপুরি পড়বে; কিন্তু ঐ কাজা নামাজ কসর করেই আদায় করবে। কারণ, সফর অবস্থায় তার কসর নামাজই কাজা হয়েছে। আর বাড়িতে থাকা অবস্থায় কোন ছুটে যাওয়া নামাজ সফরে মনে পড়লে বা কাজা পড়ার সুযোগ হলে তা পুরোপুরিই আদায় করতে হবে। মোট কথা যেমন নামাজ কাজা হবে, ঠিক তেমনিভাবে তা আদায় করতে হবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৫১৮)

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে