ঢাকা, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জানাজা শেষে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের রাজসিক বিদায়

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ নভেম্বর ১৯ ১৪:৩৪:৫১
জানাজা শেষে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের রাজসিক বিদায়

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিংবদন্তি ফুটবলার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকারিয়া পিন্টুর শেষ বিদায়টি হলো তার প্রাণপ্রিয় ক্লাব মোহামেডানের প্রাঙ্গণ থেকে। জীবনের সোনালী সময় কাটানো এই ক্লাবের মাটিতে নিথর দেহে এসে তিনি পেলেন রাষ্ট্রীয় গার্ড অফ অনার এবং সর্বস্তরের শ্রদ্ধা।

আজ সকালে ব্যস্ত মতিঝিলের মোহামেডান ক্লাবে শোকের ছায়া নেমে আসে। পিন্টুর মরদেহ রাখা হয় ক্লাবের মাঠে তৈরি করা ছোট্ট মঞ্চে। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে রাষ্ট্রীয় গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। এরপর বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন, ফেডারেশন এবং মোহামেডান ক্লাবের পক্ষ থেকে তার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

মোহামেডানের সমর্থক থেকে ক্লাবের স্থায়ী সদস্য সবাই তাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান। ক্লাব মসজিদের ইমাম আওলাদ তার জানাজা পরিচালনা করেন।

পিন্টুর একসময়ের সতীর্থ এবং মোহামেডান ও পাকিস্তান জাতীয় দলের প্রাক্তন খেলোয়াড় মেজর হাফিজ তাকে স্মরণ করে বলেন, ‘পিন্টু ছিল মোহামেডানের চীনের প্রাচীর। তার অসাধারণ পারফরম্যান্সে অনেক ম্যাচ জয় কিংবা ড্র করেছে মোহামেডান। পাকিস্তান জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে তার পরিচিতি ছিল, তবে মোহামেডানে খেলাই ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। টানা আট বছর অধিনায়ক হিসেবে তার নেতৃত্ব অপ্রতিদ্বন্দ্বী।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসানও পিন্টুর শৃঙ্খলতার প্রশংসা করে বলেন, ‘ষাটের দশক থেকে তাকে দেখছি। তার মতো শৃঙ্খলাপূর্ণ খেলোয়াড় এখন আর নেই। তার আদর্শ এবং নিষ্ঠা ছিল অনন্য।’

খেলা ছাড়ার পরও পিন্টু তার প্রাণপ্রিয় ক্লাব মোহামেডানের সঙ্গে আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন। কখনো কোচ, ম্যানেজার, কখনো দলনেতা কিংবা ক্লাবের পরিচালক হিসেবে ক্লাবের সেবায় ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। মোহামেডানের সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক আলী ফালু বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সেও ক্লাবের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হতেন, আর খারাপ ফলাফলে কষ্ট পেতেন। তার ক্লাবপ্রেম সত্যিই বিরল।’

মোহামেডান ক্লাবের বর্তমান পরিচালক এবং ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর স্মরণ করেন ক্লাবের সংকটকালে পিন্টুর পাশে থাকার কথা। তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ক্লাবের উন্নতির জন্য নিবেদিত ছিলেন। তার এই অবদান আমাদের অনুপ্রাণিত করে।’

১৯৫৭ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবলে ইস্ট এন্ড ক্লাবের হয়ে অভিষেকের পর ওয়ান্ডারার্স এবং ১৯৬০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মোহামেডানে খেলেছেন পিন্টু। ফুটবল ছাড়ার পরও তিনি ছিলেন ক্লাবের মেন্টর। শুধু ফুটবল নয়, ক্রিকেট, হকি এবং অন্যান্য ডিসিপ্লিনেও মোহামেডানের এক নম্বর অবস্থান ধরে রাখতে তিনি বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছেন।

মোহামেডানের দুই পরিচালক মাহবুব আনাম এবং গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর জানিয়েছেন, ক্লাব শিগগিরই পিন্টুর স্মরণে একটি শোকসভা আয়োজন করবে। সেখানে উঠে আসা প্রস্তাবনার ভিত্তিতে পিন্টুর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জাকারিয়া পিন্টু শুধু মোহামেডান ক্লাবের নয়, পুরো দেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক মহান ব্যক্তিত্ব। তার প্রয়াণে শূন্যতা তৈরি হলো যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে