ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ নভেম্বর ১৯ ১১:৩৬:১৩
ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

ভারতকে অবশ্যই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচার কার্যকর করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভারতের এই বিষয়ে গড়িমসি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে তিনি তার সরকার পরিচালনার ১০০ দিনের বিভিন্ন কার্যক্রম, বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে মতামত জানান।

শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করব। প্রত্যার্পণ চুক্তি অনুযায়ী ভারত যদি হাসিনাকে ফেরত না দেয়, তবে এটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য সুখকর হবে না। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার স্বল্পমেয়াদি হলেও পরবর্তী সরকারও এই ইস্যু উপেক্ষা করতে পারবে না।”

তিনি আরো অভিযোগ করেন, ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। অডিও বার্তায় কর্মীদের বিক্ষোভে অংশ নিতে উস্কানি দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা দায়িত্ব গ্রহণের সময় একটি ভঙ্গুর আর্থিক ব্যবস্থা পেয়েছিলাম। দেশের ব্যাংকিং খাতে ৬০ শতাংশ অশোধিত ঋণ ছিল, যা অর্থনীতিকে প্রায় অকার্যকর অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত ১০০ দিনে আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করেছি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পেরেছি।”

তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে উন্নতির পথে আছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আমি এখনও ‘এ’ গ্রেড দেব না, তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন ‘এ-প্লাস’।”

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত সরকারের উদ্বেগের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “সংখ্যালঘুদের বিষয়ে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা প্রকৃত চিত্র নয়। আমাদের সংবিধান সংখ্যালঘুদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করেছে, আলাদা কোনো কমিশনের প্রয়োজন নেই।”

তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার প্রথম ফোনালাপে তিনি ভারতীয় নেতাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। তবে শেখ হাসিনার ইস্যু নিয়ে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে।”

তিনি আরো বলেন, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। “দুই দেশের সম্পর্কের কারণে পুরো গোষ্ঠীকে অকার্যকর রাখা ঠিক নয়,” যোগ করেন তিনি।

ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছে। নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে নই। বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।”

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ভারতের সাথে সম্পর্ককে আরো মজবুত করার আহ্বান জানান। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ভারত গড়িমসি করলে তা শুধু দুই দেশের সম্পর্ক নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে