ঢাকা, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দেশের শিক্ষা কারিকুলাম বাতিলে প্রশংসা, পরীক্ষা বাতিলে চরম বিতর্কের জন্ম

শিক্ষা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ নভেম্বর ১৬ ২২:৫৯:০৫
দেশের শিক্ষা কারিকুলাম বাতিলে প্রশংসা, পরীক্ষা বাতিলে চরম বিতর্কের জন্ম

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শততম দিন পূর্ণ করেছে। এই সরকারের শিক্ষানীতিতে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হলেও, কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, নতুন কারিকুলাম বাতিলের সিদ্ধান্ত যেমন অভিভাবকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনি এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

২০২৩ সালে চালু হওয়া নতুন কারিকুলাম বাস্তবভিত্তিক শিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হলেও, এর প্রবর্তনে ছিল নানা অসংগতি। মুখস্থনির্ভরতা কমাতে ডিজিটাল পদ্ধতি ও কার্যক্রমভিত্তিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হলেও, এই কারিকুলাম শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

চলতি বছর চারটি শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু হলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। অভিভাবকদের দাবি ছিল, নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার প্রতি অনীহা দেখাচ্ছে এবং ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে।

অভিভাবকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন কারিকুলাম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষামন্ত্রী ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে ঘোষিত এ সিদ্ধান্তের ফলে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা আগের নিয়মে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তবে, চলতি বছরের জন্য নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই বহাল থাকলেও সেখান থেকে আগের পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারী অভিভাবকরা। "আমার সন্তান নতুন কারিকুলামের চাপ সহ্য করতে পারছিল না," উল্লেখ করে এক অভিভাবক মারজানা আক্তার বলেন, "এই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক।"

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ৩০ জুন। কিন্তু সাতটি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থানা হামলা ও প্রশ্নপত্র নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে, যা পরীক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তোলে।

আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীরা অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবি জানায়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবং সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনের পর, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অবশেষে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের নেতৃত্বে বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল এবং অটোপাস ফরমেটে ফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে। "এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর," বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তবে, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামলাতে এই সিদ্ধান্ত ছাড়া বিকল্প কিছু ছিল না।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, তার সময় নিয়োগ পাওয়া ৩০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই শূন্য পদে বিতর্কমুক্ত এবং দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছে বলে দাবি করছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইতোমধ্যে ২৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই নিয়োগে অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা ও প্রশাসনিক দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষাখাতে নেওয়া উদ্যোগগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কারিকুলাম বাতিলের মতো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হলেও, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি নিয়োগে সরকারের কার্যক্রম স্বস্তি এনে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই সরকারের শিক্ষাখাতের কার্যক্রম কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে