ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

এবার চট্টগ্রামকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ‘মাস্টারপ্ল্যান’ বাংলাদেশে উঠেছে আলোচনার ঝড়

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ নভেম্বর ১৪ ১৬:১৯:১০
এবার চট্টগ্রামকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ‘মাস্টারপ্ল্যান’ বাংলাদেশে উঠেছে আলোচনার ঝড়

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সম্প্রতি এক বিতর্কিত প্রতিবেদনের প্রচারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশি নেটিজেনরা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘রিপাবলিক বাংলা’ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, “চট্টগ্রাম বিষয়ক ভারতের হস্তক্ষেপ জরুরি,” যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপমূলক বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিবেদনটি এমন সময় প্রকাশিত হলো যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।

‘রিপাবলিক বাংলা’র ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত এই প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল “চট্টগ্রাম আলাদা রাষ্ট্র হবে? মাউন্টব্যাটেন-নেহেরুর ভুল ঠিক করার সময় এসেছে? ভারতের হস্তক্ষেপ জরুরি?” সেখানে দাবি করা হয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এবং এই উত্তেজনা নাকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আতঙ্কিত করেছে।

প্রতিবেদনে উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, “চট্টগ্রাম কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের নিকটবর্তী। এই অঞ্চলে ভারতের সমুদ্রপথের অভাব রয়েছে এবং চট্টগ্রাম ভারতের অধীনে এলে উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য পরিবহন সহজতর হবে।” তিনি আরও দাবি করেন, “চট্টগ্রাম ভারতের অধীনে এলে বঙ্গোপসাগরে ভারতের আধিপত্য বৃদ্ধি পাবে, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের এই প্রভাব থেকে দূরে থাকবে।”

ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ আরও দাবি করেন, “১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি মুসলিমপ্রধান এলাকায় পরিণত করা হয়েছে। হিন্দুরা যদি এখান থেকে বিদ্রোহ শুরু করে, তবে এটি বাংলাদেশ এবং বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।” এই দাবিগুলোকে ভিত্তিহীন ও উসকানিমূলক বলে মনে করছেন বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা।

এটি প্রথমবার নয়, যখন ‘রিপাবলিক বাংলা’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিতর্কিত এবং আজগুবি প্রতিবেদন করেছে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই তারা একাধিক বিভ্রান্তিকর ও বিতর্কিত সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। সর্বশেষ ৬ নভেম্বর চ্যানেলটি দাবি করে, “যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ড. ইউনূস প্যারিসে পাড়ি জমিয়েছেন এবং হয়তো তিনি আর দেশে ফিরবেন না।” তবে বাস্তবে ড. ইউনূস সেদিন ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং নিজ অফিসে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

‘রিপাবলিক বাংলা’র এই প্রতিবেদন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই প্রতিবেদনের কড়া সমালোচনা করেছেন এবং এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে সরাসরি আঘাত বলেও মন্তব্য করেছেন। এ ধরনের প্রতিবেদন প্রচারের মাধ্যমে ভারতের কথিত এই গণমাধ্যম বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে উসকানি ছড়াতে চাইছে বলে দাবি করেছেন অনেকেই।

চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে ‘রিপাবলিক বাংলা’র বিতর্কিত প্রতিবেদনটি ভারতীয় মিডিয়ার বাংলাদেশবিরোধী মনোভাবের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমন উসকানিমূলক প্রচারণা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্যও ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে