ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাজার থেকে উধাও সয়াবিন তেল, ‍হু হু করে বাড়ছে দাম

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ নভেম্বর ১২ ০১:৩১:৩১
বাজার থেকে উধাও সয়াবিন তেল, ‍হু হু করে বাড়ছে দাম

দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে চলছে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট। রোজা আসতে আরও চার মাস বাকি থাকলেও সয়াবিন তেলের সরবরাহ হঠাৎ করে কমে গেছে, আর এতে দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে, কোম্পানিগুলো মিল পর্যায় থেকে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, আর ডিলাররা নির্ধারিত চাহিদার তুলনায় অনেক কম তেল পাচ্ছেন। ফলে খুচরা বাজারে তেলের পরিমাণ কম থাকায় দাম বেড়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ক্রেতারা কম দামে তেল না পেয়ে বাজারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

সাম্প্রতিক মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ছাড় দেওয়ার পরও দাম কমেনি। সরকার ১৭ অক্টোবর পাম ও সয়াবিন তেলের ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়েছে, এবং উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই সুবিধা ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এই ছাড়ের সুবিধা বাজারে এখনো পৌঁছায়নি। এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭-১৭০ টাকায়, আর খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ১৮৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এ ছাড়া, রাইসব্রান এবং পাম তেলের দামও একইভাবে বেড়েছে। গত এক সপ্তাহেই পাম তেলের দাম প্রতি লিটারে ৬ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে, যার ফলে সাধারণ ভোক্তাদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন মুদি দোকানিরা জানিয়েছেন, আগের তুলনায় সয়াবিন তেলের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। এক মুদি বিক্রেতা বলেন, আগে তিনি পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল ৭৯০-৮০০ টাকায় কিনতেন, কিন্তু এখন তা সরবরাহকারী থেকে ঠিকমতো পাচ্ছেন না। ডিলাররা মাত্র কয়েকটি বোতল তেল দিচ্ছে, যা তার দোকানের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। ফলে খুচরা বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা থাকলেও সঠিকভাবে সরবরাহ দিতে না পারায় অনেকেই তেল পাচ্ছেন না।

দাম বাড়ার ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের মধ্যে বোতলজাত তেলের চাহিদা কমে গেছে। তারা খোলা তেল কেনার চেষ্টা করছেন, কিন্তু খোলা তেলেরও দাম বোতলজাত তেলের কাছাকাছি হয়ে যাওয়ায় ভোক্তারা একপ্রকার বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দাম দিয়েই তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক দোকানি এই সুযোগে বোতলের তেল খোলা ড্রামে ঢেলে খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছেন, যাতে বোতলজাত তেলের সংকটও বাড়ছে।

ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও রোজাকে কেন্দ্র করে একটি সিন্ডিকেট বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান জানিয়েছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজানের আগেই বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য সংকট সৃষ্টি করছে, যাতে রোজার সময় অতিরিক্ত দামে এসব পণ্য বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা করতে পারে। তিনি মনে করেন, এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে রোজায় পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠবে।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে। এমনকি জ্বালানি তেলের দামও প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার থেকে ৭৮ ডলারে নেমেছে, যার ফলে পরিবহণ খরচও কমেছে। দেশে ডলারের দরও কিছুটা কমেছে, যা আমদানি খরচ কমিয়ে দেওয়ার কথা। বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম গত ডিসেম্বরের তুলনায় কমেছে, কিন্তু এ সুবিধা দেশের বাজারে প্রতিফলিত হয়নি। মিল পর্যায় থেকে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার কারণে দেশে সয়াবিন তেলের দাম কমছে না, বরং বাড়ছে।

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে আমদানির ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশে নামানো উচিত, যাতে এই সংকট কিছুটা কমানো যায়। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তেলের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনিয়ম ধরা পড়লে আইনের আওতায় আনা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজা আসার আগেই এই সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, সাধারণ মানুষকে রমজানে আরও চড়া দামে তেল কিনতে বাধ্য হতে হবে, যা তাদের অর্থনৈতিক চাপে ফেলবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে