ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সাকিবের উত্থান ও পতন: প্রিয় থেকে বিতর্কিত

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ নভেম্বর ০৬ ১৬:৪৪:০৫
সাকিবের উত্থান ও পতন: প্রিয় থেকে বিতর্কিত

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত শাকিব আল হাসান, যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন, বর্তমানে দেশের রাজনীতি এবং জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। এক সময় ক্রিকেটের মাঠে তার জয়ের জন্য তিনি ছিলেন সবার প্রিয়, কিন্তু বর্তমানে তার রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলি তাকে দেশের জনগণের দৃষ্টিতে বিরোধিতার মুখে পরিণত করেছে। শাকিব এখন আর সেই আগের মতো জনগণের 'নায়ক' নন, বরং রাজনীতির কারণে 'শত্রু' হয়ে উঠেছেন।

২০০৮ সালের অক্টোবর ১৮, চট্টগ্রামে, ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে আউট করে শাকিব তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড গড়েছিলেন। তারপর থেকেই তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা হিসেবে পরিচিত। শাকিবের ক্যারিয়ারে একের পর এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী আমরা, যেমন ২০০৯ সালে প্রথম বিদেশে টেস্ট সিরিজ জয়, ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট জিততে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, কিংবা পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের মতো অনেক বড় কীর্তি।

তবে, শাকিবের ক্যারিয়ারের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে যখন তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০২৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মাগুরা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ দেশের মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনে শাকিবের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক বিতর্কিত, বিশেষ করে যখন তা নিয়ে আন্দোলন ও প্রতিবাদ শুরু হয়। সরকার বিরোধী আন্দোলনের মুখে শাকিবের প্রতি জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়, এবং তার উপস্থিতি দেশে নিরাপদ হয়ে ওঠে না।

অক্টোবর ২০২৪-এ, শাকিব যখন ঢাকা ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দেশে ফিরতে নিষেধ করা হয়, কারণ তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ বাড়ছিল। মিরপুর ছাত্র জনতা নামের একটি ছাত্র সংগঠন শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের বাইরে সমাবেশ করে, শাকিবের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানায়।

শাকিবের রাজনীতিতে আসার আগেই তার ক্রিকেট জীবন ছিল উজ্জ্বল, কিন্তু এখন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তার ইমেজে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। একদিকে তার ক্রিকেটের সাফল্য, অন্যদিকে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, এই দ্বন্দ্বে শাকিব আজ আর সেই আগের মতো জনগণের নায়ক নন। বিশেষ করে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তার সাম্প্রতিক নীরবতা এবং রাজনৈতিক অবস্থানকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।

ক্রীড়া এবং রাজনীতি কখনো একে অপরকে প্রভাবিত করতে পারে, এবং শাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে। যেহেতু তিনি এখন আর দেশে ফিরে আসতে পারেন না, এবং তার ক্যারিয়ারের বাকি অংশ সীমিত হয়ে আসছে, তাই তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারও আর দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। আগামী ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি খুব সম্ভবত দূরের স্বপ্ন হয়ে থাকবে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, কেন এমন উত্থান-পতন শাকিবের ক্ষেত্রে ঘটলো? তার ক্রিকেটে অগণিত সাফল্য রয়েছে, কিন্তু দেশের জনগণের বিপক্ষে যাওয়া তার সাফল্যকে ম্লান করেছে। এক সময় যে শাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটের অহংকার ছিলেন, আজ তিনি রাজনীতির কারণে জনগণের চোখে 'বিরোধী' হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

এরপর শাকিব কীভাবে নিজের পরিস্থিতি সামলাবেন এবং তার স্বীকৃতির জন্য কি কিছু করতে পারবেন, তা সময়ই বলবে। তবে, তার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়া এবং জনগণের বিক্ষোভ তাকে যে জায়গায় দাঁড় করিয়েছে, তা কোনোভাবেই তার ক্রিকেট জীবনের সাথে মিশিয়ে দেখা সম্ভব নয়। এটি তার জীবনের একটি বড় অধ্যায় হয়ে থাকবে, যা তাকে এবং তার ক্যারিয়ারের legacy কে চিরকাল প্রভাবিত করবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে