ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে চালাত ওবায়দুল কাদেরের পঞ্চপাণ্ডব

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ অক্টোবর ১১ ১৭:১৯:১৫
শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে চালাত ওবায়দুল কাদেরের পঞ্চপাণ্ডব

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ভেতরে "পঞ্চপাণ্ডব" নিয়ে দলীয় অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দলীয় নেতাদের একাংশ মনে করেন, এই পাঁচ নেতা দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা একচেটিয়া করে ফেলেছেন এবং দলকে কার্যত নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পরিচালনা করছেন।

"পঞ্চপাণ্ডব" বলতে আওয়ামী লীগের পাঁচ শীর্ষ নেতা বোঝানো হচ্ছে, যারা শেখ হাসিনার পরে দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা হলেন:

ওবায়দুল কাদের (সাধারণ সম্পাদক): দলের সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তিনি জেলা ও থানা কমিটিগুলো অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা রেখেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের এড়িয়ে নিজের পছন্দের লোকদের পদায়ন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি শেখ হাসিনার অনুমোদনের বদলে নিজের ইচ্ছামত জেলা কমিটিগুলো তৈরি করেছেন।

হাছান মাহমুদ (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক): তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন। প্রচার ও গণমাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি নিয়ন্ত্রণেও তিনি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন।

বিপ্লব বড়ুয়া (দপ্তর সম্পাদক): দলের প্রতিদিনের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি দলীয় ফাইল, তথ্য ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকায়, তার মাধ্যমে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ড. সেলিম মাহমুদ (তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক): দলের বিভিন্ন নীতিমালা তৈরিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে তিনি গবেষণামূলক ও তথ্য বিশ্লেষণধর্মী কাজের জন্য পরিচিত। তার প্রভাবের কারণে অন্য অনেক নেতার দলীয় গবেষণায় প্রবেশের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে।

ড. আবদুস সোবহান গোলাপ (প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক): প্রচার সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে তার প্রভাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দলের প্রচার কার্যক্রম এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে সংযোগের দায়িত্ব তার হাতে থাকায়, তিনি দলের বাইরে এবং ভেতরে সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন।

দলীয় নেতারা মনে করেন, পঞ্চপাণ্ডবের কারণে অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং ভূমিকা কমে এসেছে। বিশেষ করে, বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা, যেমন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, এবং ডা. দীপু মনি, যারা আগে দলের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন, তারা পঞ্চপাণ্ডবের ছায়ায় থেকে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতার দাবি, দলীয় পদের বণ্টন এবং মনোনয়নের ক্ষেত্রে এই পাঁচ নেতার প্রভাব এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও তারা প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। বিশেষ করে শেষ দুটি জাতীয় নির্বাচনে পঞ্চপাণ্ডবের মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যেখানে ব্যক্তিগত পছন্দের প্রার্থীকে তারা মনোনীত করতেন।

অনেক নেতার মতে, করোনাভাইরাস মহামারির সময় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ সীমিত হয়ে যায়। এর ফলে পঞ্চপাণ্ডবের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায়, কারণ তারা যখন-তখন শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন। অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ কমে যাওয়ায়, দলের অভ্যন্তরীণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেখ হাসিনা জানতেন না বা আংশিক জানতেন। পঞ্চপাণ্ডবের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে তিনি অনেক সিদ্ধান্ত নিতেন, যা অনেকক্ষেত্রে দলের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়।

অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, পঞ্চপাণ্ডবের কারণে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাত বেড়ে গেছে। দলীয় পদায়নে স্বজনপ্রীতি এবং প্রভাবশালী নেতাদের ব্যক্তিগত পছন্দকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ফলে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের দাবি, মাঠপর্যায়ের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে, যা সাংগঠনিক দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে, পঞ্চপাণ্ডবের প্রভাব এবং তাদের দাপটের কারণে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন। দলীয় পদবির বণ্টন থেকে শুরু করে নির্বাচনী মনোনয়ন পর্যন্ত সবকিছুতে তাদের আধিপত্য বিস্তার, দলকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করেছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে