ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

দান নয়, সহযোগিতা চান ক্রিকেটার সাকিব মাহমুদুল্লাহ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ অক্টোবর ০৭ ১০:২৭:৩৬
দান নয়, সহযোগিতা চান ক্রিকেটার সাকিব মাহমুদুল্লাহ

সাকিব মাহমুদুল্লাহ, একসময় রংপুরের উদীয়মান ক্রিকেটার, আজ দৃষ্টিশক্তি হারানোর হুমকির মুখে। একসময় স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলার, এখন সেই স্বপ্ন ম্লান হতে চলেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে চোখে গুরুতর আঘাত পান তিনি। বর্তমানে তিনি এক প্রকার অন্ধত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। কিন্তু সাকিব দানের অর্থ চান না, তার একমাত্র চাওয়া— চিকিৎসার জন্য সহায়তা। তিনি কেবল তার চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে চান, যাতে তার হারানো স্বপ্নগুলোকে আবার ছুঁতে পারেন।

রংপুরের কারমাইকেল কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র সাকিব মাহমুদুল্লাহ, সৈয়দপুরের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা আকবর আলী একজন মাংস ব্যবসায়ী, যিনি ছোটবেলা থেকেই সাকিবকে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। মায়ের আদর আর বাবার অনুপ্রেরণায় সাকিবের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে জাতীয় দলে খেলার। কিন্তু ২০২৩ সালের জুলাই মাসের একটি ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

১৮ জুলাই সৈয়দপুরে বন্ধুদের সাথে বৈষম্য বিরোধী মিছিলে যোগ দেন সাকিব। সেই মিছিলেই পুলিশের গুলিতে আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি। গুলি লাগে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে এবং দুটি চোখেও। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও, তার বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি আর ফিরে আসেনি। ডান চোখও ক্ষীণ হয়ে আসছে, এবং দিন দিন তার দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা বেড়ে চলেছে।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শেষ হলেও, সাকিবের জীবন থেমে নেই। সে এখনও চিকিৎসার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। তার পরিবার দেশের আপামর মানুষের সহানুভূতি কামনা করছে, যাতে সাকিব তার হারানো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারে।

সাকিব বলেন, ‘দান হিসেবে কোন টাকা পয়সা চাই না। শুধুমাত্র চিকিৎসা সহযোগিতা চাই। চোখের আলো ফেরত চাই। আবার ক্রিকেটের মাঠে ফিরতে চাই। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’

জানা যায়, সাকিবের বাবা ছেলেকে ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এজন্য ছেলের নাম রেখেছিলেন সাকিব মাহমুদুল্লাহ। ছোটবেলা থেকে ছেলেকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন শহর-গ্রামের একাধিক ক্রিকেটের মাঠ। যেভাবেই হোক তৈরি করবেন ছেলেকে। ছেলে একদিন জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলবে এটাই ছিলো স্বপ্ন। খেলার মাঠে খানিকটা পোক্ত হতেই বাবা মারা গেছেন ২০১৭ সালে। কিন্তু সাকিবের স্বপ্ন থেমে থাকেনি। বাবার দেখানো পথে এলাকার বিভিন্ন মাঠে খেলে ইতোমধ্যেই ক্রিকেটের আসরে কুড়িয়েছেন অনেক সুনাম। এরপর দূর-দূরান্তের বিভিন্ন মাঠে ডাক পড়তে শুরু করে তার। এমন ডাকে খানিকটা আয়ও আসতে শুরু করে। খেলার আয়েই চলতো নিজের লেখাপড়ার খরচ। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলি এলোমেলো করে দিয়েছে সাকিবের শৈশবের লালিত স্বপ্ন। গুলির আঘাতে আহত হয়ে হারিয়েছেন বাম চোখের আলো। ডান চোখও এখন নষ্ট হওয়ার পথে।

সাকিব মাহমুদুল্লাহ জানান, তার বাবার মৃত্যুর পর বড় দুই ভাই আকতার কোরাইশি এবং তাজুল হাসান সংসারের হাল ধরেন। তারাও পেশায় মাংস ব্যবসায়ী। সাকিব ক্রিকেট খেলে নিজের পড়ার খরচ যোগাড় করতেন। জেলা ক্রিকেট দলে প্রথম বিভাগে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে খেলতেন তিনি। এখন চোখের আলো নিভে যাওয়ার সাথে সাথে অর্থাভাবে শিক্ষাজীবনও থেমে যাবে হয়তো তার।

সাকিবের বড় ভাই আকতার কোরাইশি জানান, বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার দাসের ত্বত্তাবধানে চিকিৎসা চলছে সাকিবের। অপারেশনে তার বাম চোখে থাকা ছররা গুলি বের করা সম্ভব হলেও রেটিনার অংশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করালে চোখের আলো ফিরে পাবার সম্ভাবনা আছে। এখনো তার মাথা থেকে আটটি, নাকে একটি ও চোয়ালে একটি বিঁধে থাকা ছররা গুলি বের করা যায়নি।

তিনি আরো জানান, ‘চিকিৎসকরা বলেছেন দেশে তার চিকিৎসা নেই। দেশের বাইরে নিয়ে গেলে চোখ বাঁচানো যেতে পারে। এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। সে টাকা পরিবারের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব না’।

সাকিবের মা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘অনেক তাজা জীবনের বিনিময়ে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলো, সেই স্বাধীন দেশে আজ আমার ছেলে দেখতে পাবেনা তা মানতে পারছি না। ছেলের চোখের আলো ফিরে পেতে সরকারসহ দেশের মানুষের সহযোগিতা চাই’।

সৈয়দপুর উপজেলার সাবেক ক্রিকেটার মোক্তার সিদ্দিকী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে সাকিব আমার কাছে মাঠে অনুশীলন করে। সে আমার সিটি ক্রিকেট ক্লাবের নিয়মিত একজন খেলোয়াড়। এখন তাকে মাঠে ফেরাতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। পরিবারের পক্ষে সে ভার বহন করা সম্ভব না।’ তিনি সাকিবের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে সরকার ও প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের তালিকা হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। নীলফামারী জেলা থেকেও একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের কাছে এখনও কোনো দিক নির্দেশনা আসেনি। তবে সাকিবের পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ যোগাযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে