ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

মালয়েশিয়া প্রবাসীরা জেনেনিন গুরুত্বপুর্ণ কিছু তথ্য, না জানলো ভুল করবেন

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ অক্টোবর ০৫ ০৪:৪৩:৩৩
মালয়েশিয়া প্রবাসীরা জেনেনিন গুরুত্বপুর্ণ কিছু তথ্য, না জানলো ভুল করবেন

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সম্পর্ক একটি দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল অধ্যায়। ১৯৯২ সালে প্রথম চুক্তির মাধ্যমে শ্রমবাজার খুললেও, নানা সমস্যার কারণে এটি বারবার বন্ধ ও পুনরায় চালু হয়েছে। অবৈধ কর্মীর প্রবাহ, রিক্রুটিং সিন্ডিকেটের প্রভাব, এবং প্রশাসনিক জটিলতা এই সমস্যাগুলোর মূল কারণ হিসেবে দাঁড়ায়।

শ্রমবাজারের অস্থিরতার জন্য মালয়েশিয়াকে "আনস্টেবল মার্কেট" বলা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী। তার মতে, এই বাজারে ধারাবাহিকভাবে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কোনো স্থায়ী বা নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। বৈধ ও অবৈধ উভয়ভাবে কর্মী পাঠানোর চ্যালেঞ্জ সামনে আসে, যা দুই দেশের শ্রম সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে।

২০১২ সালে একটি নতুন চুক্তির মাধ্যমে শ্রমবাজার পুনরায় চালু করা হয়। তবে সিন্ডিকেটের আধিপত্য ও দুর্নীতির কারণে ২০১৮ সালে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন সরকার শ্রমবাজারটি আবারও বন্ধ করে দেয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি শ্রমিকদের শোষণের একটি বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০২১ সালে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আরেকটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে বাংলাদেশ সরকার ১৫৬১টি বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠায়। তবে মালয়েশিয়া সরকার কেবল ১০১টি এজেন্সিকে অনুমোদন দেয়, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল একেবারে নতুন এবং অভিজ্ঞতাবিহীন। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নতুন করে শ্রমবাজারের সংকট তৈরি করতে পারে।

২০২২ সালের জুন মাসে দুই দেশের মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে শ্রমবাজার পুনরায় চালু করার বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়। এর ফলশ্রুতিতে, অগাস্ট মাসে শ্রমবাজার পুনরায় চালু হয় এবং ২০২৩ সালেই তিন লাখ ৫১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় কর্মরত হয়।

তবে শ্রমবাজারের খোলার সাথে সাথেই নানা সমস্যার অভিযোগও প্রকাশ পেতে শুরু করে। ২০২৩ সালে অনেক শ্রমিক কাজ না পাওয়া, চুক্তি অনুযায়ী মজুরি না পাওয়া, নির্যাতন এবং নিখোঁজ হওয়ার মতো গুরুতর সমস্যায় পড়েন। মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোতে এ নিয়ে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, যেখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা এবং শোষণের ঘটনা বেড়েছে।

জাতিসংঘের কনটেম্পোরারি স্লেভারি বিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার তমোয়া ওবোকাতা বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে দুই দেশের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র যুক্ত, যা শ্রমিকদের জন্য একটি গুরুতর মানবাধিকার সমস্যা তৈরি করছে।

ওবোকাতা বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার ভেতরে একটি শক্তিশালী অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে। যারা চাকরি এবং ভালো বেতনের কথা বলে শ্রমিকদের মালয়েশিয়ার নিয়ে প্রতারণা করছে। তারা পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শ্রমিকদের কাছ থেকে। ফলে শ্রমিকরা ঋণের চক্রে আটকে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া নির্দিষ্ট কোম্পানিতে কাজ না পাওয়ায় শ্রমিকরা অবৈধ হয়ে পড়ে। এই অবৈধ শ্রমিকদের যারা চাকরি দেয়, তারাও এদের শোষণের সুযোগ হাতছাড়া করে না। ফলে সমস্যাটা এখানে বেশ গভীর।’

তার মতে, বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়া- দুই দেশের সরকারকেই শ্রমিক নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া সংশোধন করতে হবে যেন শ্রমিকরা নির্যাতিত না হয়।

এ বছরের ৩০শে মের পর থেকে আবার বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার। বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী অবশ্য জানান, শুধু বাংলাদেশ নয় সবদেশ থেকেই কর্মী নেয়া বন্ধ করেছে মালয়েশিয়া। তারা তাদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে কর্মী নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে