ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

৪৬ বছরের জেল খাটার পর প্রমাণিত হলেন নির্দোষ: জাপানের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৬ ২২:০৯:৪৯
৪৬ বছরের জেল খাটার পর প্রমাণিত হলেন নির্দোষ: জাপানের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা

জাপানে ৪৬ বছর কারাগারে থাকার পর ইয়াও হাকামাদা নামের এক ব্যক্তিকে অবশেষে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে, যা জাপানের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘতম কারাদণ্ডের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ৮৮ বছর বয়সী হাকামাদাকে ১৯৬৮ সালে তার কর্মস্থলের মালিক, তার স্ত্রী এবং তাদের দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে একইসঙ্গে ওই পরিবারের বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

হাকামাদা তখন থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন। তিনি জানান, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল। তার আইনজীবীরাও বারবার দাবি করে আসছিলেন যে, মামলার তদন্ত ও প্রমাণপত্রে জালিয়াতি করা হয়েছে। কিন্তু এসব যুক্তি প্রথমে আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে হাকামাদা ৪৬ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় কারাগারে ছিলেন।

২০১৪ সালে হাকামাদার মামলায় নতুন প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পুনরায় বিচার করার নির্দেশ দেয়। শিজুওকা জেলা আদালতের প্রধান বিচারক কোশি কুনি তার রায়ে উল্লেখ করেন, হাকামাদার বিরুদ্ধে দেওয়া স্বীকারোক্তি জোর করে আদায় করা হয়েছিল। কৌঁসুলিরা যে তিনটি প্রমাণ উপস্থাপন করেছিল, তার সবই জাল প্রমাণিত হয়। বিশেষত, হত্যার সময় হাকামাদা যে পোশাক পরেছিলেন বলে দাবি করা হয়েছিল, সেটিতে রক্ত লাগিয়ে প্রমাণ তৈরি করা হয়েছিল।

রায়ে বিচারক আরও উল্লেখ করেন যে, তদন্তকারীরা অমানবিক মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের মাধ্যমে হাকামাদার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করেছিলেন। আদালতের এই রায় জাপানের বিচারব্যবস্থায় এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ভুলভাবে অভিযুক্ত একজন মানুষ অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন।

হাকামাদার আইনজীবীরা এবং অধিকারকর্মীরা আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা এটিকে জাপানের বিচারব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে দেখছেন। তবে ৪৬ বছর কারাগারে কাটানোর পর তার জীবনের মূল্যবান সময় যে কখনোই ফেরত আসবে না, সে বিষয়টিও বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন তারা।

হাকামাদার এই দীর্ঘ লড়াই এবং অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া একটি দুঃখজনক বাস্তবতার প্রতিফলন, যেখানে বিচারিক ভুলের ফলে একজন মানুষ তার জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় বন্দি অবস্থায় কাটাতে বাধ্য হয়েছেন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে