ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কোনো চার না মেরে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন হেটমায়ার

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৭ ০৯:৪৪:৩৪
কোনো চার না মেরে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন হেটমায়ার

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) অসাধারণ এক ইনিংস খেলে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন শিমরন হেটমায়ার। সেন্ট কিটস এবং নেভিস প্যাট্রিয়টসের বিপক্ষে ৯১* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে রেকর্ড গড়েছেন হেটমায়ার। তবে এই ইনিংসের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, তিনি একটিও চার না মেরেই এই বিশাল সংগ্রহ করেন—যা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অত্যন্ত বিরল।

গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলতে নামা হেটমায়ার পুরো ইনিংসে কোনো চার মারেননি, কিন্তু মারেন ১১টি ছক্কা! সেন্ট কিটসের বাসেতেরে মাঠে খেলা এই ইনিংসটি তার দলকে জয়ের পথে বড় অবদান রাখে। এই দুর্দান্ত ইনিংসের মাধ্যমে হেটমায়ার ভেঙে দেন পূর্বের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড, যা কোনো চার ছাড়াই সবচেয়ে বেশি রান করার ক্ষেত্রে তাকে শীর্ষস্থানে নিয়ে যায়।

হেটমায়ারের এই রেকর্ড গড়া ইনিংসের আগে, কোনো চার না মেরে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ড ছিল শাশ্রিকা পুসসেগোল্লার দখলে। তিনি ২০২২ সালের জুন মাসে সেবাস্টিয়ানাইটসের হয়ে পুলিশ স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষে ৭৮ রান করেছিলেন। তবে হেটমায়ারের ৯১* সেই রেকর্ডকে ছাপিয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাধারণত ব্যাটসম্যানরা চার এবং ছক্কার মিশ্রণে দ্রুত রান তুলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু হেটমায়ারের ইনিংসটি প্রমাণ করে দিল যে শুধুমাত্র ছক্কা মেরেও বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। চার ছাড়াই এত বড় ইনিংস খেলা টি-টোয়েন্টিতে খুবই বিরল ঘটনা, এবং হেটমায়ারের এই ৯১* রান এখন পর্যন্ত কোনো চার ছাড়া সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

যেখানে চার মেরে রান সংগ্রহ করা সাধারণত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়, সেখানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আজকাল আরও বেশি করে শক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে। হেটমায়ারের ইনিংসটি হলো সেই আধুনিক প্রবণতার একটি উদাহরণ, যেখানে খেলোয়াড়রা চার মারার চেয়ে ছক্কা মারাকেই প্রাধান্য দেন। বিশেষত সিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে ছোট বাউন্ডারি এবং শক্তিশালী ব্যাটসম্যানরা বড় শট খেলার ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন।

গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেছিল। শুরুতে কিছুটা চাপে পড়লেও হেটমায়ার দ্রুত ইনিংসটি নিয়ন্ত্রণে নেন। ৪৫ বলে ৯১* রানের অপরাজিত ইনিংসটি দলকে প্রতিযোগিতামূলক একটি সংগ্রহ এনে দেয়, যা পরে সেন্ট কিটস ও নেভিস প্যাট্রিয়টসকে হারানোর মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

হেটমায়ারের ইনিংসটি অবশ্যই বিশেষ, তবে কোনো চার বা ছক্কা ছাড়াই টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডটি এখনও নাভদীপ পুনিয়ার দখলে। ২০০৮ সালের আগস্টে বেলফাস্টে, স্কটল্যান্ডের হয়ে বারমুডার বিপক্ষে পুনিয়া ৩৮* রান করেন, তবে সেখানে কোনো চার বা ছক্কা ছিল না। পুনিয়ার ইনিংস ছিল কেবল সিঙ্গেল-ডাবল করে রান তোলার উপর নির্ভরশীল, যা হেটমায়ারের পাওয়ার-হিটিং-এর বিপরীত।

শিমরন হেটমায়ার অনেক দিন ধরেই বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম বিস্ফোরক প্রতিভা হিসেবে বিবেচিত। এই ইনিংসটি তার সেই প্রতিভার আরও এক উজ্জ্বল প্রদর্শনী ছিল। তার ছক্কা মারার অসাধারণ দক্ষতা এবং চাপের মধ্যে শান্ত থাকার মানসিকতা তাকে তার দল ও ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের জন্য অমূল্য সম্পদে পরিণত করেছে।

এই পারফরম্যান্স শুধু তার দলকে জয় এনে দেয়নি, বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে হেটমায়ারের মতো খেলোয়াড়রা নতুন ধরণের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবেন।

যদিও ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, তবু হেটমায়ারের এই রেকর্ড ভাঙা কঠিন হবে। কোনো চার ছাড়া এত বড় ইনিংস খেলতে হলে ব্যাটসম্যানের মধ্যে অসাধারণ শক্তি, ধৈর্য এবং ম্যাচ পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকা দরকার। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে হয়তো হেটমায়ারের মতো আরও কিছু খেলোয়াড় উঠে আসবেন যারা নতুনভাবে খেলাটিকে সংজ্ঞায়িত করবেন।

শেষ পর্যন্ত, সিপিএল ২০২৩-এ শিমরন হেটমায়ারের এই ৯১* রানের ইনিংসটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, যা তার অসাধারণ ছক্কা মারার ক্ষমতা এবং নতুন আঙ্গিকে বড় ইনিংস খেলার কৌশলকে তুলে ধরেছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে