ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

সুযোগ সন্ধানী বিএনপির দাপটে অস্থির ঢাকা দক্ষিণ সিটি, চলছে মারধর ও চাঁদাবাজি

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ আগস্ট ৩০ ১৪:০৪:১৩
সুযোগ সন্ধানী বিএনপির দাপটে অস্থির ঢাকা দক্ষিণ সিটি, চলছে মারধর ও চাঁদাবাজি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে নিজেদের প্রভাব দেখানো শুরু করেছে সুযোগ সন্ধানী বিএনপি। দলবল নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। টেন্ডার-চাঁদাবাজি নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর-লাঞ্ছিত করছেন তারা।

জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে বিএনপির নেতাকর্মীরা সিটি কর্পোরেশনের শীর্ষ পর্যায়ের ৫ জন কর্মকর্তাকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। একজন কর্মকর্তাকে তার কক্ষ থেকে বের করে সবার সামনে মারধর করা হয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তার কাছ চাঁদা আদায় করার তথ্যও পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নগর ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। অনেকে ভীতির মধ্যে রয়েছেন। ফলে দাফতরিক কাজেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

ডিএসসিসি সূত্র বলছে, বিএনপিপন্থী একজন শ্রমিক নেতা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগের কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছেন তাকে না জানিয়ে কাউকে বদলি করা যাবে না। পদোন্নতি ও পদায়ন বন্ধ রাখতে হবে। ঐ শ্রমিক নেতা সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব কর্মী।

অন্যদিকে, এ ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে লাঠি নিয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ সিটির গত নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ২৮ আগস্ট নিজের ফেসবুক পেইজে তিনি লিখেছেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, বাজার, মার্কেট, হকার বা অন্য কোনো বাণিজ্যিক এলাকায়/স্থাপনায় আমার অথবা আমাদের দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদা চাইলে/দখল করতে চাইলে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দিন। আমিও দলের নির্দেশে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে লাঠি নিয়ে নামবো। আর এক মুহূর্ত ছাড় দেওয়া হবে না।’

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুইদিন আগে গোপনে দেশ ছাড়েন সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এরপর থেকে দক্ষিণ সিটির আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৬৭ জন কাউন্সিলরও আত্মগোপনে। এমন পরিস্থিতিতে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন দফতর থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কিছু নেতাকর্মী। তাদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারাও রয়েছেন।

সিটি কর্পোরেশন সূত্র বলছে, শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এস এম মোশারফ হোসেন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান ও সূত্রাপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মেহেদী হাসান নগর ভবন নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি বলছে, মোশারফ, আরিফুজ্জামান ও মেহেদীর পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের নেতা সৈয়দ মুকিতুল হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে আলম ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইহসান মামদুদ তাদের অনুসারীদের নিয়ে নগর ভবনে মহড়া দিচ্ছেন।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মহ. শের আলী জানান, তিনি অল্প সময়ের জন্য নগর ভবনে যান। পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ভালোভাবে বলতে পারবেন

মারধর ও চাঁদাবাজি

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর সিটি কর্পোরেশনের পরিবেশ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও সাবেক মেয়র তাপসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত খায়রুল বাকের নগর ভবনে ঢুকতে পারছিলেন না। ২০ আগস্টের পর নগর ভবনে যাওয়া শুরু করেন। এর মধ্যে একদিন ধাওয়া দিয়ে তাকে নগর ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে চাঁদা দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন তিনি।

একজন শ্রমিক নেতা বলেন, খায়রুল বাকের কাউকে কাউকে টাকা দিয়েছেন।

দক্ষিণ সিটি সূত্র বলছে, সংস্থাপন শাখা-৩ এর সহকারী সচিব রোকনুজ্জামানকে ২৫ আগস্ট মারধর করেন মেহেদী ও আরিফুজ্জামানের অনুসারীরা। পরে ২৭ আগস্ট এই কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়া হয়েছে। ঐ টাকার ভাগ পাওয়া একজন শ্রমিক নেতা বলেন, তিনি এক লাখ টাকা পেয়েছেন।

নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দখল-চাঁদাবাজিতে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে অনেক বড় বড় নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যেসব অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, প্রমাণ পেলে শক্ত হাতে দমন করা হবে।

নষ্ট হচ্ছে কাজের পরিবেশ

দক্ষিণ সিটির নিজস্ব তেলের পাম্প সায়েদাবাদের পৌর ফিলিং স্টেশনের দরপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার নগর ভবনে মারামারি হয়। এই ফিলিং স্টেশন পরিচালনার জন্য একজন ঠিকাদারের প্রতিনিধি নগর ভবনের সম্পত্তি বিভাগে দরপত্র জমা দিতে এলে হামলা চালানো হয়। হামলার বিষয়ে যুবদল নেতা সৈয়দ মুকিতুল হাসান বলেন, মারামারির ঘটনা শুনে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি সূত্র বলছে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী বোরহান উদ্দিনসহ অনেক কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে তাদের হেনস্তা করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির কিছু নেতাকর্মী কর্পোরেশনে ঢুকে ঠিকাদারি, ইজারাসহ নানা সুবিধা দিতে চাপ দিচ্ছেন। তারা যে অবস্থা সৃষ্টি করছেন, তাতে কাজের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে