জানা গেল ৩ আগস্ট হেলমেট হলে সেনাবাহিনীর বৈঠকে যে সব আলোচনা হয়েছিল
রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে তৈরি করা একটি বিশেষ সংস্থা, যেটি পুর্ববর্তী সরকারের আমলে একটি দমনমূলক যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল, সেই সংস্থাটি থেকে শুধু আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ৩ আগস্টের বৈঠক নিয়ে কিছু লিখতে বা প্রতিবেদন তৈরি করতে নিষেধ করা হয়েছিল।
৩ আগস্ট সেনাপ্রধানের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তরুণ সেনা কর্মকর্তারা "নিজেদের জনগণের ওপর গুলি নয়"— এই মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও স্পষ্ট করে বলেছিলেন, এখন থেকে আর কোনো গুলি নয়।
এই মনোভাব এবং সিদ্ধান্তের ফলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম সেনাপ্রধানের সঙ্গে তার কর্মকর্তাদের বৈঠক নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেও প্রতিরক্ষা বিষয়ক অনেক বছরের পুরনো চর্চার কারণে আইএসপিআর (ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস) থেকে তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিবেদন করেনি। পরে সংবাদ করলেও বৈঠকের ফলাফল খুব একটা প্রকাশ করতে পারেনি।
রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে তৈরি করা একটি বিশেষ সংস্থা, যেটি পুর্ববর্তী সরকারের আমলে একটি দমনমূলক যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল, সেই সংস্থাটি থেকে শুধু আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ৩ আগস্টের বৈঠক নিয়ে কিছু লিখতে বা প্রতিবেদন তৈরি করতে নিষেধ করা হয়েছিল।
তবে, দেশের অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সেনাবাহিনীর অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছিল। সেখানে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, "বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনের পাশে দাঁড়াবে।"
ওই গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সন্তোষজনক না হওয়ায় সংস্থাটি গণমাধ্যমকে, বিশেষত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে বিজ্ঞপ্তির "জনগণের পাশে দাঁড়ানো" অংশটি ব্যবহার করতে নিষেধ করে।
সকল গণমাধ্যম না হলেও বেশ কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়া এই নির্দেশ পালন করে "জনগণের পাশে দাঁড়ানো" শব্দগুলো তাদের ব্রেকিং নিউজ টিকার থেকে মুছে দেয়।
আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেনাপ্রধানের বক্তৃতার কয়েকটি বাক্য উল্লেখ করা হয়েছিল, কিন্তু টিবিএস সেই সময় আরও অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করে।
টিবিএস সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত তথ্যে জানতে পারে বৈঠকটি ৩ আগস্ট দুপুর ১:৩০টা থেকে শুরু হয়ে ১০ মিনিটের বিরতি নিয়ে দেড় ঘণ্টা চলেছিল।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রায় আধা ঘণ্টার একটি উদ্বোধনী বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন সেনাবাহিনীকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সিভিল প্রশাসনের সহায়তায় নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার যদি সেনাবাহিনীকে সংকট মোকাবেলায় নিয়োজিত করে তাহলে তারা সেই আদেশ মানতে বাধ্য। তবে তিনি যোগ করেন, তার সেনারা কাউকে হত্যা করেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কতগুলো গুলি এবং ফাঁকা গুলি চালানো হয়েছে— তার পরিসংখ্যানও তিনি বৈঠকে তুলে ধরেন।
এক পর্যায়ে, সেনাপ্রধান দুটি গানের কথা উল্লেখ করেন। একটি গান ছিল, "আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার ওপরে পড়েছে", যা দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি কোনো ঝামেলা ডাকেননি বরং ঝামেলা নিজেই তাঁর এবং সেনাবাহিনীর সামনে এসেছে।
আরেকটি গান ছিল প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পি আইয়ুব বাচ্চুর "আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেবো আকাশে", যা দিয়ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন।
বক্তব্য শেষে সেনাপ্রধান বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা শোনানোর জন্য আমন্ত্রণ জানান। ব্রিগেডিয়ান জেনারেল এবং এর চেয়ে ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা হাত তুললেও সেনাপ্রধান তাদের নিরুৎসাহিত করেন এবং তরুণ কর্মকর্তাদের কথা শোনার প্রতি জোর দেন।
এতে, একজন লেফটেনেন্ট কর্নেল টিবিএসকে বলেন, কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হতাশ হলেও জুনিয়র কর্মকর্তারা তাদের মতামত প্রকাশ করার সাহস পান। ৬ থেকে ৭ জন কর্মকর্তা নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা শোনান।
বক্তব্যে একজন কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, খুলনায় সেনাবাহিনীর প্রতি এমন একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা স্বাধীন বাংলাদেশে কখনো হয়নি।
তখন তিনি প্রশ্ন করেন, "কিসের জন্য?"
রাজশাহীর একজন নারী সেনা কর্মকর্তা বাংলায় একটি আবেগপূর্ণ বক্তৃতা পাঠ করে বলেন, দেশের সব মাকে মৃত্যু স্পর্শ করেছে এবং সব মা কাঁদছেন।
তিনি মীর মুগ্ধর প্রতিবেশী ছিলেন, যে মুগ্ধ ঢাকার উত্তরায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে পানি বিতরণ করার সময় নিহত হন।
ঢাকা সেনানিবাসের হেলমেট হলে [বৈঠকের মূল স্থান] এবং সারাদেশের বিভিন্ন গ্যারিসন থেকে অনলাইনে গুরুত্বপূর্ণ ওই অধিবেশনে যোগদানকারী অন্যদের মধ্যে তখন নীরবতা বিরাজ করতে শুরু করে।
বৈঠকে অন্তত একটি আপাত হাস্যরসের ঘটনা ছিল।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি গুলির ঘটনা সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। ওই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ক্যাপ্টেন বর্ণনা করেন যে কীভাবে কর্তব্যরত সেনা সদস্যদের জনতা ঘিরে ধরেছিল এবং তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য গুলি চালাতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, "আমি আমার নিজের পরিবারের সদস্যদের থেকে, আমার বন্ধুদের থেকে এবং আমার প্রিয়জনদের থেকে সমালোচনার শিকার হয়েছিলাম। তারা ভিডিওটি দেখেছিলেন।"
ক্যাপ্টেন বৈঠকে বলেছিলেন, "আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের সমালোচনার পরে আমি হতাশাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। সম্ভবত আমার হতাশা দেখে আমার স্ত্রী আমার মন ভালো করার জন্য বলেছিলেন, ভিডিওতে আমাকে দেখতে সুন্দর লাগছিল।"
সেনাপ্রধান তখন রসিকতা করে বলেন, "কেউ আমাকে কখনও সুন্দর বলে না।" সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য তিনি আবারো বৈঠকে গুরূত্বপূর্ণ আলাপে ফিরে আসেন এবং বলেন, সেনাবাহিনী প্রথমে দেশ এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে।
দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মধ্য বিরতি দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়েছিল, বিরতির পর আরও কর্মকর্তারা কথা বলবেন।
তবে বৈঠক পুনরায় শুরু হলে সেনাপ্রধান কিছু কথা বলেন এবং তরুণ অফিসারদের কথার প্রতিধ্বনি করে "গুলি না করার" চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়ে বৈঠকটি শেষ করেন।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বোর্ড মিটিং শেষ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা
- আজ ১৮/১২/২০২৪ তারিখ, দেখেনিন আজকের ১৮ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট, ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার দাম
- ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০তে উড়িয়ে দিয়ে আইসিসি রেটিংয়ে বড় লাফ বাংলাদেশের, দেখেনিন সর্বশেষ তালিকা
- ব্রেকিং নিউজ: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা
- সব জল্পনা কল্পনার অবসান, ঘোষাণা দিয়ে দিলেন মুস্তাফিজ
- সৌদি রিয়াল রেটের বিশাল লাফ, দেখেনিন আজকের রেট কত
- ঢাকার অবস্থা ভ*য়া*ব*হ খারাপ
- ব্রেকিং নিউজ: নি*হত ৮৫৮ জন, আ*হত ১১ হাজার ৫৫১ জন
- সাকিব-তামিমের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিয়ে বোর্ড মিটিং শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলো বিসিবি
- সৌদি রিয়াল রেটের বিশাল লাফ, দেখেনিন আজকের রেট কত
- ব্রেকিং নিউজ: হেলিকপ্টার দু*র্ঘ*ট*না*য় ভারতের সেনা প্রধান নি*হ*ত
- হাসান আরিফের মৃত্যুতে শূন্য পদে নতুন উপদেষ্টা হিসেবে আসছেন যিনি
- বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ১৬ সদস্যের স্কোয়াডে দুইটি বড় চমক
- অবিশ্বাস্য হারে বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট, দেখেনিন আজকের রেট কত
- অবিশ্বাস্য হারে কমলো সৌদি রিয়াল রেট, দেখেনিন আজকের রেট কত