ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বিশ্ব বাজারে সোনার দামে বিশ্ব রেকর্ড

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ আগস্ট ১৮ ১৫:৫০:১৭
বিশ্ব বাজারে সোনার দামে বিশ্ব রেকর্ড

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক সংকটের এ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়েই চলেছে। এতে মূল্যবান এই ধাতুর দাম বেড়ে আবার রেকর্ড সর্বোচ্চ হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, গত শুক্রবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়ে প্রতি আউন্স দুই হাজার ৫০৭ ডলারে ওঠে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। দেখা যায়, এক দিনে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ২.০৫ শতাংশ, এক সপ্তাহে বেড়েছে ৩.১৮ শতাংশ এবং এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১.৮৯ শতাংশ।

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর সম্ভাবনায় সোনার দাম আরো বাড়বে।ট্রেডিং ইকোনমিকস বলেছে, হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের ভূখণ্ডে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অচিরেই ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা করা হবে, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঘটতে পারে। এতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ লেগে যেতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে আবার মন্দায় টেনে নেবে। অন্যদিকে ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ায় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।

বালিয়নভল্টসের গবেষণা পরিচালক অ্যাড্রিয়ান অ্যাস বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে সোনার চাহিদা বেড়েছে। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অবিরাম এ চাহিদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’ তাঁর মতে, ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ওজন হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনার চাহিদা বেড়েছে ১৯ শতাংশ। আর মার্কিন ডলার মূল্যে এটির চাহিদা সাত গুণ বেড়ে হয়েছে ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডাব্লিউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানায়, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্ববাজারে মূল্যবান এই ধাতুর চাহিদা বাড়ে এক হাজার ২৫৮ টন, যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি। যেকোনো বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এটি রেকর্ড।

সংস্থার মতে, সোনার ওটিসি লেনদেন বৃদ্ধির কারণেই মোট চাহিদা বেড়েছে। মূল্যবান এই ধাতুর ওটিসি লেনদেন এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৫৩ শতাংশ।

এ ছাড়া দ্বিতীয় প্রান্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সোনার মজুদ বেড়েছে ১৮৩ টন, যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি।

ডাব্লিউজিসির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জরিপে বলা হয়, আগামী ১২ মাস কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয় বাড়বে। মূলত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় পোর্টপোলিও সুরক্ষার পাশাপাশি রিজার্ভে বৈচিত্র্য আনার জন্য সোনা ক্রয় বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাও বড় ভূমিকা রাখছে। ডাব্লিউজিসির সিনিয়র বিশ্লেষক লুইসে স্ট্রিট বলেন, ‘সোনার চাহিদা বৃদ্ধি ও রেকর্ড ভাঙা দামের কারণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ও ওটিসি মার্কেটের শক্তিশালী চাহিদা। পুরো বছর ধরেই এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনার দামের এ উত্থানকে ত্বারান্বিত করেছে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয়। বিশেষত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ডলার ছেড়ে সোনায় ভরসা রাখতে চাইছে দেশগুলো। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা ক্রয় বাড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। টানা ১৪ বছর সোনাক্রয় অব্যাহত রেখেছে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলে ৪৫০.১ টন সোনা কিনেছিল। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩৫.৭ টনে এবং ২০২৩ সালে দেশগুলোর সোনা কেনার পরিমাণ ছিল ১০৩৭ টন। সব মিলিয়ে বিগত বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয়ের নজিরবিহীন আকাঙ্ক্ষা ডলারের প্রতি আস্থাহীনতাই স্পষ্ট করছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে