ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

আমি নিজেকে ও সবাইকে হতাশ করেছি, আমার চিন্তা ছিল শুধু এতিম ছেলে গুলোকে নিয়ে: মাশরাফি

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ আগস্ট ১৪ ২১:৫৩:৪৪
আমি নিজেকে ও সবাইকে হতাশ করেছি, আমার চিন্তা ছিল শুধু এতিম ছেলে গুলোকে নিয়ে: মাশরাফি

একটা সময় ছিল যখন মাশরাফি বলতে পাগল ছিল সবাই। তার নামে গোটা গ্যালারি ফাটিয়ে দিত ভক্ত সমর্থকরা। তিনিই এক সময় ছিলেন মাহানায়ক। এখন হয়ে গেছেন মার্ভেল মভির সবচেয়ে বড় ভিলেন থ্যানোসের মত ভক্তদের কাছে। কোটা আন্দোলনের সময় চুপ থাকা, দলের উর্ধ্বে উঠে মানুষের পাশে থাকতে না পারার ব্যাপারটি তুমুল আলোচনা সমালোচনা জন্ম দেয়।

এর ফলশ্রুতিতে পুড়িয়ে দেয়া হয় তার বাড়ি। তবে এবার সব কিছু নিয়ে নিরবতা ভেঙেছেন মাশরাফি। দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সব কিছু পরিস্কার করেছেন।

তার মানে, আপনি মেনে নিচ্ছেন যে অসংখ্য মানুষকে আপনি হতাশ করেছেন?

মাশরাফি: সেটা তো বারবার বলছিই। যা চেয়েছি, তা পারিনি। একটা-দুটি স্ট্যাটাস (ফেইসবুকে) দিলে হয়তো গা বাঁচাতে পারতাম। তার পরও অনেকে সমালোচনা করতেন, অনেকে খুশি হতেন। কিন্তু আমার জায়গা থেকে আরও বড় পরিসরে কিছু করার চেষ্টা করেছি। সেটিও পারিনি। কাজেই ব্যর্থ হয়েছি অবশ্যই।

এই ব্যর্থতার কারণে সামাজিক মাধ্যমে আপনার তুমুল সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। এমনকি নড়াইলে আপনার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা তো কিছুদিন আগেও অকল্পনীয় ছিল। ক্ষোভ থেকেই কি লোকে আপনার বাড়িতে আক্রমণ করেছে?

মাশরাফি: জানি না… হয়তো একটা ‘মব’-এর মতো হয়েছে এবং হুট করেই উত্তেজিত কিছু লোক এটা করেছে। কারণ, নড়াইলের মানুষের ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো কিছু আমি করিনি বলেই মনে করি। কেন তারা বাড়িতে হামলা করল, এই কারণ আমিও খুঁজেছি এবং খুঁজছি।

আমার বাড়ির দুয়ার সবসময় সব মানুষের জন্য খোলা ছিল। সংসদ সদস হওয়ার পরও তেমনই ছিল। আমি নড়াইলে গেলে রাত ১টা-২টা পর্যন্ত লোকের ভিড় থাকত বাসায়। আমি রাজনীতিতে আসার পরই জানতাম, সবাই আমাকে ভোট দেবে না বা সবাই পছন্দ করবে না। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আমি সবারই এমপি। আমি সেভাবেই চিন্তা করেছি এবং কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার আসনে কোনো ভিন্ন মতের কাউকে কখনও দমন করিনি, ভিন্ন পথ আটকাইনি। নড়াইল সদর ও লোহাগড়ায় যেন সব দলের সব মতের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি গত সাড়ে ৫ বছরে। কাজেই লোকের ক্ষোভ থাকার কথা নয়।

কিংবা কে জানে, থাকতেও পারে (ক্ষোভ)। হয়তো সবার কাছে পৌঁছতে পারিনি। লোকে যেভাবে চেয়েছে, সেই প্রত্যাশা হয়তো পূরণ করতে পারিনি। তবে আমার জ্ঞানত, নড়াইলের জন্য সম্ভাব্য সবকিছু আমি করেছি।

প্রায় ২০ বছর জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলেছি। আমার পরিসংখ্যান বলবে না, আমি দুনিয়ার সেরা বা দেশের সেরা ক্রিকেটার। তবে আমি জানি, চেষ্টা সবসময় করেছি। রাজনীতির মাঠেও আমি এমন বড় কেউ নই। ৫-৬ বছরে কেউ বড় হতে পারেও না। কিন্তু এখানেও চেষ্টার কমতি রাখিনি। আমার চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়া, সব নড়াইল ঘিরেই ছিল। নড়াইলের উপকার নিয়ে কাজ করেছি নিজের পরিবারকে ভুলে।

কাজেই, নিজেও জানি না, কেন আমার বাড়ি পোড়ানো হলো।

আমার বাড়ির কাছেই সভাপতি মহোদয়ের বাড়ি। শুরুতে তার বাড়িতে আক্রমণ করা হয়, গাড়িতে আগুন দেয়। পরে আমাদের বাড়িতে প্রথম ধাপে কেউ কিছু করেনি। দ্বিতীয় ধাপে কয়েকজন এসে ইট-পাটকেল মেরেছে। তৃতীয় দফায় আরেকটা গ্রুপ এসে বাসায় ঢুকে কিছু ভাঙচুর করেছে। পরের দফায়, মাগরেবের আজানের আধ ঘণ্টা আগে মনে হয়, ওই গ্রুপে যারা এসেছে, তারা ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে।

এখন আর কী বলব, জানি না। সব মিলিয়ে হতাশ তো অবশ্যই। রাজনীতিবিদ হিসেবেও কিছু করতে পারলাম না। নিজের পরিবার, বাবা-মায়ের জন্যও কিছু পারলাম না।

হামলার একটু আগেও আপনার মা সম্ভবত বাড়িতেই ছিলেন…

মাশরাফি: মা কয়েক মিনিট আগেও ছিলেন বাড়িতে। বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর তো আমার মায়ের আর একটা কাপড়ও ছিল না। এক কাপড়ে বের হয়েছেন।

উনারাও তো আসলে এরকম কিছু বুঝতে পারেননি। বাসায় কয়েকটি ছেলে-মেয়ে থাকে, ওরাই আগে দেখেছে। আপনারা অনেকেই জানেন, এলাকার এতিম-অসহায় কিছু বাচ্চাকে বাসায় রাখেন মা। অনেক বছর আগে থেকেই রাখেন। কারও হয়তো বাবা-মা নেই বা বাবা-মা কেউ বিয়ে করেছে আবার, বাচ্চাকে রাখতে চায় না। এরকম কিছু বাচ্চাকে বাড়িতে এনে রাখেন আমার মা। তাদের পড়ালেখা করাতেন। পরে তারা একটু বড় হয়ে নিজের পথ বেছে নিত। এরকম ৬-৭ জন ছিল বাসায়। ওরাই দেখেছে, সামনে মাঠ থেকে লাঠিসোটা নিয়ে অনেকে আসছেন। ওরাই গিয়ে বাবা-মাকে বলেছে বাইরে চলে যেতে।

ওই বাচ্চাদের ভবিষ্যতও এখন অনিশ্চিত হয়ে গেল। দেখি কী করা যায়… কিছু তো ব্যবস্থা হবেই।

আপনার সব ক্রিকেট স্মারকও তো তাহলে পুড়ে শেষ!

মাশরাফি: আমি তো এমন বড় ক্রিকেটার নই বা এমন নয় যে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। তবে যা কিছু পেয়েছি, প্রায় সব ওখানেই ছিল। ঢাকায় কিছু নেই। সব পুড়ে শেষ। এমন নয় যে, স্মারকগুলির প্রতি আমার টান অনেক বেশি ছিল। তবে মাঝেমধ্যে দেখতে ভালো লাগত। অনেক লোকে বাড়িতে যেত এসব দেখতে। সবার জন্যই তো দুয়ার খোলা ছিল। কিছুই আর নেই।

তবে দিনশেষে সান্ত্বনা যে, বাবা-মা অন্তত প্রাণে বেঁচে গেছেন। যা গেছে, কথা বলে লাভ নেই।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে