ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সদ্য সংবাদ

সৌদি শ্রমবাজারে জটিলতা: ভিন্ন এজেন্সির লাইসেন্সে কর্মী প্রেরণ, দায়ভার নিতে চাচ্ছে না কেউ

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ জুন ২২ ১০:৪৯:১২
সৌদি শ্রমবাজারে জটিলতা: ভিন্ন এজেন্সির লাইসেন্সে কর্মী প্রেরণ, দায়ভার নিতে চাচ্ছে না কেউ

সৌদি আরবে খাবার সরবরাহের কাজের কথা বলে ৬০ জন কর্মী পাঠিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সি ট্রাস্ট কর্নার ওভারসিজ। তবে এই এজেন্সি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত নয়। তারা পাবলিক কেয়ার ওভারসিজের (আরএল-২০৪২) লাইসেন্স ব্যবহার করে কর্মীদের পাঠিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কর্মীরা প্রত্যেকে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ করে সৌদি আরবে যান।

কথা ছিল, সৌদি আরবে পৌঁছার তিন দিনের মধ্যে কাজ পাওয়া যাবে, আর বেতন হবে দেড় থেকে দুই হাজার রিয়াল। কিন্তু চার মাস পরও এসব কর্মী কোনো কাজ পাননি। উল্টো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বরাবর অভিযোগ করেছেন কর্মীরা। তবে যে দুই রিক্রুটিং এজেন্সি এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তারা কর্মীদের এই দুরবস্থার ব্যাপারে কোনো দায় নিচ্ছে না, বরং পরস্পরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

#### কর্মীদের অভিযোগ

চলতি বছরের মার্চে সৌদি আরবে কাজ করতে যান নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাসিন্দা মাহির তাজোয়ার খান মর্ম। তিনি রিক্রুটিং এজেন্সি ট্রাস্ট কর্নার ওভারসিজকে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন। মর্ম জানতেন, সৌদি আরবে যাওয়ার পর তিনি ১৭ হাজার রিয়াল বেতনে রেস্তোরাঁয় খাবার সরবরাহের কাজ পাবেন। কিন্তু সেই কাজ তো তিনি পেলেনই না, উল্টো যাওয়ার এক মাস পর থেকে তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি দেশে ফিরতে চান। তখন তাঁকে ১৫ হাজার রিয়াল মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসতে হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় চার লাখ ৭২ হাজার টাকা।

মাহির তাজোয়ার খান মর্ম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সৌদি আরব যাওয়ার পর জেদ্দার একটি বাসায় আমাকে রাখা হয়। সেখানে প্রতিদিন দুই বেলা ভাত ও ডাল খেতে দেওয়া হতো। এভাবে এক মাস পার হওয়ার পরও আমাকে আমার কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। একদিন হঠাৎ বাসার সুপারভাইজার আমাকে তাঁর রুম পরিষ্কার করতে বলেন। আমি প্রতিবাদ করে আসল কাজটা বুঝে পেতে চাই। এতে তিনি আমাকে গালাগাল ও শারীরিক নির্যাতন করেন। সুপারভাইজার আমাকে জানিয়ে দেন, আমি কাজ পাব না।’

মাহির আরও বলেন, ‘আমি দেশে ফিরতে চাইলে সুপারভাইজার আমার পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেন এবং ১৫ হাজার রিয়াল দাবি করেন। বিষয়টি আমার পরিবারকে জানাই। পরিবারের পক্ষ থেকে ট্রাস্ট কর্নারের স্বত্বাধিকারী মিনহাজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্রুত এ সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। তবে সুপারভাইজার আমার পরিবারের যোগাযোগের দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে আমাকে একটি গাড়িতে করে আরেক জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে উপস্থিত সবাই মিলে আমাকে গালাগাল ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। আমাকে বলা হয়, এখান থেকে মুক্তি পেতে হলে ১৫ হাজার রিয়াল দিয়েই মুক্তি পেতে হবে, নইলে পুলিশে দেওয়া হবে।’

#### অন্য কর্মীদের অভিজ্ঞতা

মাহির জানান, সেখানে এই রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া আরও প্রায় ৬০ জন কর্মী এভাবে আটকে রয়েছেন। কালের কণ্ঠের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন কুমিল্লা সদর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাকিব। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন দেশ থেকে আসি, আমাদের বলা হয়েছিল আমরা রেস্টুরেন্টে কাজ করব। আমাদের ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে এবং বেতন হবে এক হাজার ৮০০ রিয়াল। কিন্তু আজকে তিন মাস ধরে তাঁরা শুধু বসিয়ে রেখেছেন, কোনো কাজ দেন না। যখনই কাজ চাই তখনই বলেন, “হবে, এখন আমরা যা বলি, তা করো।” তাঁদের কাজ না করতে চাইলেই নির্যাতন শুরু করে দেন। আমরা এই জায়গা থেকে মুক্তি চাই।’

আরেক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা বাড়ি যেতে চাইলে বলা হয় ১৫ হাজার রিয়াল দিয়ে বাড়ি যেতে হবে। আমাদের এত রিয়াল দেওয়ার সাধ্য নেই। একটা বিপদের মধ্যে পড়ে গেছি।’

#### লাইসেন্সের ব্যবহার

রিক্রুটিং এজেন্সি ট্রাস্ট কর্নার ওভারসিজের কোনো লাইসেন্স নেই। তাদের বিএমইটির সব কাগজপত্র হয়েছে পাবলিক কেয়ার ওভারসিজের নামে।

মাহির জানান, তাঁদের জানানো হয়েছিল, লাইসেন্সবিহীন এজেন্সিগুলো পাবলিক কেয়ার ওভারসিজের মাধ্যমে কর্মী পাঠিয়ে থাকে। পাবলিক কেয়ার ও ট্রাস্ট কর্নার একসঙ্গে কাজ করে বলে জানানো হয়েছিল।

#### দায়ভার নিয়ে জটিলতা

এ ব্যাপারে ট্রাস্ট কর্নারের স্বত্বাধিকারী মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘যাদের লাইসেন্স ব্যবহার করে কর্মীগুলো গেছেন, তারাই এর দায় নেবে।’ অন্যদিকে, পাবলিক কেয়ার ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী সোহেল আহমেদ মিয়াজি বলেন, ‘আমরা শুধু ভিসা প্রসেসিং করি। আমরা ভিসা দিই না বা কাউকে ভিসা দিয়ে পাঠাইও না। আমার কাজ ছিল শুধু প্রসেস করে দেওয়া।’

#### পরবর্তী পদক্ষেপ

বায়রার যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিবাসী আইনের মতে, এই কর্মীগুলো বিএমইটির ছাড়পত্র যে এজেন্সির লাইসেন্স ব্যবহার করে পেয়েছেন, এজেন্সিকেই এর দায়ভার নিতে হবে। তবে যেহেতু দুটি রিক্রুটিং এজেন্সি এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাই দুজনকেই এর দায় নিতে হবে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। লাইসেন্সবিহীন এজেন্সিগুলো যাতে কর্মীবিষয়ক কোনো প্রচারণা করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। এতে কর্মী ভোগান্তি কমে আসবে।’

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে