ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণ ‘এল নিনো’

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ এপ্রিল ২৯ ১৩:১১:০৩
বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণ ‘এল নিনো’

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘এল নিনো’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল আগেই। মার্চ মাস আসতেই দেখা গেল সেই আশঙ্কা মিথ্যা নয়। ‘এল নিনো’-এর প্রভাবে মারাত্মক পরিস্থিতি হতে চলেছে বিশ্বজুড়ে। আর সেই প্রভাব থেকে বাদ থাকছে না বাংলাদেশও।

আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, এল নিনোর ফলে কমে যেতে পারে বৃষ্টির পরিমাণ, বাড়তে পারে গরম। বাস্তবেও যা ঘটছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে যে কারণে বিপর্যস্ত, সেই ‘এল নিনো’ বিষয়টা আসলে কী? কোথা থেকে এল এই এল নিনো? দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরে দেখা যায় এল নিনো। তাহলে বাংলাদেশ ও ভারতে কেন এর প্রভাব পড়ে?

১৬ শতকের কথা। দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের একদল জেলে মাছ ধরছিলেন। এই সময় তারা প্রথম খেয়াল করলেন সমুদ্রের পানি তুলনামূলক উষ্ণ। অথচ এমনটা থাকে না। এই অঞ্চলের পানি স্বাভাবিক বা তুলনামূলক শীতল থাকে।

অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতির নাম তারা দিলেন ‘এল নিনো দে নাভিদাদ’। স্প্যানিশ ‘নাভিদাদ’ শব্দের অর্থ ইংরেজিতে ‘ক্রিসমাস’। অর্থাৎ ক্রিসমাসের সময়ের এল নিনো। সেই সময় তারা দেখেছিলেন, ডিসেম্বরে মূলত এমনটা হয়। অর্থাৎ ক্রিসমাসের সময়ে।

এল নিনো কথাটিও স্প্যানিশ। এর অর্থ, দুষ্টু ছেলে। এখন আর এল নিনো শুধু ডিসেম্বরে আসে না। এপ্রিল-মে মাসের দিকেও দেখা যায় এ পরিস্থিতি। আসলে, এল নিনো মানে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত। এই স্রোতের ফলে উষ্ণ হয়ে ওঠে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল, বিশেষ করে পেরুর দিকের পানি। এ সময় দক্ষিণ গোলার্ধের পুবালী বায়ুর প্রবাহ বদলে যায়।

পুবালী বায়ু সাধারণত পেরু থেকে অস্ট্রেলিয়ার দিকে বয়ে যায়। এল নিনো পরিস্থিতিতে এই বায়ুপ্রবাহ কমে যায়, থেমে যায় অথবা উল্টে যায় এর দিক। বায়ু তখন পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়। ফলে যে সমুদ্রস্রোত উষ্ণ পানিকে অস্ট্রেলিয়ার দিকে বয়ে নেয়ার কথা, তার দিকও উল্টে যায়।

সমুদ্রস্রোতের টানে উষ্ণ পানি বয়ে যায় পেরু, অর্থাৎ দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের দিকে। এই পানি আসে অস্ট্রেলিয়া উপকূল থেকে। ফলে অস্ট্রেলিয়া উপকূলে পানি নেমে যায়। আর বেড়ে যায় পেরু উপকূলের সমুদ্রের তাপমাত্রা ও উচ্চতা। এসব পরিবর্তনের কারণে পেরুতে বায়ুর উর্ধ্বমুখী পরিচলন ঘটে।

বাংলাদেশ, ভারত বা দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়টা কী? পুবালী বায়ু যখন পূর্বে না বয়ে পশ্চিমে বয়ে যায়, তখন অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার—এই পুরো অঞ্চলটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়। কারণ, বাতাসের প্রবাহ সমুদ্রস্রোতকে বয়ে নিতে থাকে পশ্চিম দিকে।

ফলে পশ্চিমের দিকে বৃষ্টি বাড়ে। আর বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত—এসব অঞ্চলে দেখা দেয় বৃষ্টির অভাব। বেড়ে যায় তাপমাত্রা। শুকিয়ে যায় মাটি। এমনকি খরাও দেখা দিতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এখনও ঠিক জানেন না, এল নিনো কখন বা কেন হয়। আমরা জানি, বায়ুপ্রবাহের দিক বদলে যাওয়ার ফলে এমনটা হয়। কিন্তু কেন এই বদলে যাওয়া, তা জানা যায়নি। তা ছাড়া প্রতিটি এল নিনো পরিস্থিতি ভিন্ন হয়। এর প্রতি বায়ুমণ্ডলের প্রতিক্রিয়াও তাই ভিন্ন হয় প্রতিবার। প্রত্যেকবার এরকম ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এবং সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না থাকায়, এল নিনোর পেছনের কারণ এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

সাধারণত ৪ থেকে ৭ বছর পরপর এই পরিস্থিতি দেখা দেয়। স্থায়ী হয় ১২ থেকে ১৮ মাসের মতো। কিন্তু বর্তমানে এটি আরও ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে