ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে দরপতন চলছেই, গোপন রহস্য ফাঁস

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ এপ্রিল ০২ ১৫:৪৩:০৬
পুঁজিবাজারে দরপতন চলছেই, গোপন রহস্য ফাঁস

পুঁজিবাজারে দরপতন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধারাবাহিক পতনে যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। মাত্র দেড় মাসে (৪৮ কার্যদিবসে) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসসি) বিনিয়োগকারীদের ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

গত ১৮ জানুয়ারি থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের বাজারমূল্যের হিসাব বিবেচনায় এ ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এ সময়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৪৮ দিন।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে প্রতিদিন বাজার মূলধনের হিসাব করে ডিএসই জানায়, গত ১৮ জানুয়ারি বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। ১ এপ্রিল তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৪৮ দিনে তালিকাভুক্ত সব সিকিউরিটিজ ১ লাখ ১০ হাজার ২৩১ কোটি টাকা বাজারমূল্য হারিয়েছে।

শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারে পতন শুরু হয়। গত ২১ জানুয়ারি থেকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কয়েক ধাপে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। এরপর কিছুদিন বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ে। তবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় একটানা দরপতন। এর আগে, শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতেই ২০২২ সালের জুলাই থেকে সর্বশেষ দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল।

এক তথ্যে দেখা গেছে, গত তিন মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ১ এপ্রিল) শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে মোট ৬১ দিন। এর মধ্যে ৩২ দিনই সূচকের পতন হয়েছে। আর সূচক বেড়েছে ২৯ দিন।

টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা ভয়ে শেয়ারবাজার ছেড়ে দিচ্ছেন। আরো দরপতন হতে পারে, এ ভয়ে লোকসানেও অনেকে শেয়ার বিক্রিও করে দিচ্ছেন। সিডিবিএলের তথ্যানুযায়ী, গত ১৮ মার্চ শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৯। ১ এপ্রিল দিন শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৯২–এ। অর্থাৎ ১০ কার্যদিবসের ব্যবধানে ৩৩ হাজার ৮৪৩ জন বিনিয়োগকারী তাদের বিও হিসাবে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে ফ্লোর প্রাইস বাজারের জন্য নানামুখী সংকট তৈরি করেছে। এসময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন, অন্যদিকে দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে নগদ টাকারও সংকট রয়েছে। এসব কারণে বাজারে টানা দরপতন চলছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বাজারকে আমরা বাজারের গতিতেই চলতে দিতে চাই। বাজার যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে আশা করছি শিগগিরই নিজস্ব শক্তিতেই বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ, ভালো অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত পর্যায়ে নেমে গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে ভালো কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হচ্ছে, অন্যদিকে কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো হচ্ছে খারাপ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এটিও বাজারের প্রতি ভালো বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ। বছরের পর বছর কিছু খারাপ কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেগুলোর বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপই নেয়নি।

এদিকে গতকাল সোমবার ডিএসই ও সিএসইতে সূচকের বড় পতনের মধ্য দিয়ে কার্যদিবস শেষ হয়েছে। তবে ডিএসইতে লেনদেন বাড়লেও, কমেছে সিএসইতে।

ডিএসইতে সোমবার সবকটি সূচকের মান কমেছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৮ দশমিক ৩২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৬১ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে। আর ডিএস-৩০ সূচক ১৩ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট ও ডিএসইএস সূচক ১৪ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে যথাক্রমে ২ হাজার ৭ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট ও ১ হাজার ২৫১ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে।

তবে ডিএসইতে এদিন বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এদিন লেনদেন হয়েছে ৪৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার। যেখানে গত কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৬৭ কোটি টাকার শেয়ার। লেনদেন বেড়েছে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে