ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

ভাইয়ের ইন্টারভিউ নিলেন বোন, সাংবাদিক হলেন ভাইও

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ মার্চ ০৮ ২২:৪৯:২০
ভাইয়ের ইন্টারভিউ নিলেন বোন, সাংবাদিক হলেন ভাইও

হবিগঞ্জের মাঠে জাকির আলী অনিক আগে ‘অপুর ভাই অনিক’ নামে পরিচিত ছিলেন। বড় ভাই শাকির আলী আপু বিভাগীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতেন। মহিলা ক্রিকেট দলের হবিগঞ্জের অধিনায়ক ‘শাকিলা ববির ভাই’ নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি। তার ক্রিকেট যাত্রার পর, তিনি এখন সাংবাদিকতায় একটি পূর্ণ-সময়ের কর্মজীবন শুরু করেন। তরুণ এই ব্যাটসম্যানের আরেকটি পরিচয় জাতীয় শুটার নাফিসা তাবাসসুমের স্বামী। তার বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং বাস্কেটবল সহ সব ধরণের খেলা খেলতেন। তবে জাকির আলীর সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন গর্বিত সদস্য।

সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলে নজর কেড়েছেন জাকির আলী অনিক। ১৪ ম্যাচ খেলেও তিনি ১০ ইনিংসে ব্যাট করেছেন। টেইল এন্ডে ব্যাট করে দলের জন্য তার ইনিংস কার্যকর ছিল। জাকির ১০ ইনিংসে ৯৯.৫ গড়ে এবং ১৪১.৪৩ স্ট্রাইক রেটে ১৯৯ রান করেছেন। বিপিএলে ভালো খেলে জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। তবে শ্রীলঙ্কায় চলমান সিরিজে তার অন্তর্ভুক্তি কম নাটকীয় ছিল না। শুরুতে দলে ছিলেন না এই তরুণ ব্যাটসম্যান। পরবর্তীতে, অ্যালিসকে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং সিরিজ শুরুর ঠিক আগে জাতীয় দলের দরজা খুলে দেন। প্রথম ম্যাচে বাজিমাত শুরুর লাইনআপে সুযোগ পায়। সিলেটের এই বাড়িটির বাসিন্দা ৩৪ বলে ৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছেন রেকর্ড ছয়টি ছক্কা মেরে।

সিলেটে ঘরের মাঠে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নপূরণ হয়েছে জাকের আলির। অবশ্য গেল বছরই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন যদিও, তবে সেগুলো ছিল এশিয়ান গেমসে। এবার মূল দলের একাদশে সুযোগ পেলেন। ভাইয়ের মতো স্বপ্নপূরণ হয়েছে বোন শাকিলা ববিরও। আজকের জাকেরের পেছনে এই বোনের অগ্রণী ভূমিকার কথা গেল কদিনে মিডিয়ার কল্যাণে জেনে গেছে সবাই। সিলেটে প্রথম ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে প্রশ্নও করেছিলেন ববি। তবে এবার আরও বড় পরিসরে দুজন মুখোমুখি হলেন। সেটি বিসিবির সৌজন্যে। বোনের কাছে সাক্ষাৎকার দিলেন ভাই। শেষদিকে বোনের হাত থেকে বুম নিয়ে নিজেও বনে গেলেন কয়েক মুহূর্তের সাংবাদিক!

চলুন জেনে নেওয়া যাক ভাই-বোনের কথোপকথন

শাকিলা ববি : প্রথমেই জানতে চাই, ন্যাশনাল টিমে আসলেন, কেমন লাগছে?

জাকের আলি : আলহামদুলিল্লাহ। ফিলিংসটাতো অনেক ভালো। সবারই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। ছোটোবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল জাতীয় দলে খেলবো, ম্যাচ জেতাবো। সবকিছু মিলিয়ে ভালোই লাগছে।

শাকিলা ববি: ন্যাশনাল টিমের কন্ডিশনটা আপনার কাছে প্রথম, যেহেতু মাত্র তিনটা ম্যাচ (মূল দলে দুই ম্যাচ খেলেছেন)খেলেছেন। দলে আপনার মানিয়ে নিতে কেমন লাগছে?

জাকের আলি : টিমের পরিবেশটা আমার খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে প্রথম দিনে সবাই আমাকে যেভাবে স্বাগত জানিয়েছে, এটা আমার কাছে খুব স্পেশাল ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি স্পেশাল কেউ এসেছি, সবাই আমাকে যেভাবে ড্রেসিংরুমে বরণ করে নিয়েছে। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।

শাকিলা ববি: এবার একটু পারিবারিক প্রসঙ্গে আসি। আপনার বেড়ে ওঠার পেছনে আপনার পরিবারের অনেক ভূমিকা আছে। আপনার বাবা নেই (মারা গেছে)। উনার স্বপ্ন ছিল আপনি জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন, আর উনি মাঠে বসে থাকবেন। এখন উনি নেই, আপনি জাতীয় দলে। এ বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?

আবেগী প্রশ্নে নিজেকে সামলে নিয়ে জাকের বলেন, আসলে সবার ভূমিকা ছিল। বাবার ছিল, ভাইয়ের ছিল এবং আপনারও ছিল (হাসি)। আপনি অনেক কষ্ট করেছেন, আমাকে প্র্যাকটিচে নিয়ে গিয়েছেন। কারও ভূমিকা বাদ দেওয়ার মতো উপায় নেই। সবারই স্বপ্ন ছিল আমাকে এই জায়গায় দেখা। আমার দায়িত্ব এখন কিভাবে সামনের দিকে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আমার মনে হয় কাজটা আরও বেড়েছে।

শাকিলা ববি : হবিগঞ্জের মানুষ আপনার নামে অনেক ক্রেজ। আপনার জন্য অনেক দোয়াও আছে তাদের।

জাকের আলি : হবিগঞ্জের সবাই আমার জন্য দোয়া করতো। সবাই চাইতো আমি যেন জাতীয় দলে খেলি। যখনই বাড়ি যেতাম, সবাই বলতো তুই কবে খেলবি। আমি সবসময়ই বলতাম, যখন সময় হবে খেলবো ইনশাআল্লাহ।

এবার আমি একটা প্রশ্ন করি? আমাকে ভাই হিসেবে খেলতে দেখে আপনার কেমন লাগছে?

শাকিলা ববি : এই অনুভূতি আসলেই ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। সেই ছোটোবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল। এটা অনেক ভালো লাগার। এটা আপনিও ভালো বুঝবেন। যখন মাঠে খেলছিলেন, প্রেসবক্সে বসে আমার চোখ দিয়ে পানি আসছিল, কান্না করছিলাম। বাসার সবাইও আপনাকে দেখে কান্না করছিল।

সবশেষে বোনকে আলিঙ্গন করে সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করেন জাকের আলি অনিক।

খেলা - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ