ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী খেলায় মানুষের উপছে পড়া ভিড়

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ জানুয়ারি ১৫ ১২:২৭:০৫
ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী খেলায় মানুষের উপছে পড়া ভিড়

ঐতিহ্যবাহী খেলা 'হাম গুটি'

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ঢোল পিটিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী 'আমরা গুটি' খেলা। কিংবদন্তি আছে যে হাম গুটি খেলাটি ২৬৫ বছর ধরে চলছে। এই খেলায় কোন নির্দিষ্ট সময় এবং খেলোয়াড়ের সংখ্যা নেই। কোনো পরিচালক নেই। প্রায় এক মণ ওজনের পিতল দিয়ে তৈরি বলের মতো বস্তুকে 'গুট্টি' বলে। এভাবেই খেলা হয়।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) শত শত খেলোয়াড় দল বেঁধে খেলার কেন্দ্রস্থল টেলিগ্রাম বড়াইটা গ্রামে আসেন। লাখ লাখ মানুষ খেলা দেখতে আসেন। সন্ধ্যায় হাজার হাজার খেলোয়াড় খেলা দেখতে ভিড় জমায়। খেলা চলে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত।

রোববার বিকেলে ঐতিহ্যবাহী আমরা গুটি খেলার উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মালেক সরকার

উদ্বোধন শেষে জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী ও জামিনদার জমিদার হেম চন্দ্র রায়ের সীমান্তবর্তী বড়াইটা গ্রামের ধান ক্ষেতে হাজারো খেলোয়াড়ের মাঝে প্রায় ৪০ কেজি ওজনের হাম গুটি মুক্তাগাছা অবমুক্ত করা হয় এবং শুরু হয় হট্টগোল। খেলোয়াড়রা চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলা শুরু করে: পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর এবং দক্ষিণ।

এদিন টেলিগ্রামের বড়াইটা গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় পৌষ মেলা। উৎসবের মেজাজ চলে গ্রামে গ্রামে। দেওখোলা, টেলিগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, বড়ইহাটা, ভাটিপাড়া, বালাশ্বর, শুভরিয়া, কালিবাজাইল, দশমাইল, কুকরাইল, কাটাখালী, মোহাম্মদনগরসহ আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের মিলনমেলা।

জনশ্রুতি আছে যে, মুক্তাগাছার জমিদার শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরী এবং জামিনদার জমিদার হেম চন্দ্র রায় তাদের প্রজাদের মধ্যে জমি পরিমাপের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য 'আমরা গুটি' নামে একটি কৌশল ও শক্তির খেলার আয়োজন করেছিলেন। খেলার শর্ত ছিল জমিদারের প্রজারা 'হাম গুটি' নিতে পারবে, জমিদারের সাড়ে ছয় শতাংশ জমি হবে এক কাঠা। পরাজিত জমিদারের আয়তন হবে এক কাঠা প্রতি ১০ শতাংশ।

জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর প্রজারা খেলায় জয়লাভ করেন। এরপর থেকে জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর 'পরগনা' এলাকায় জমির পরিমাপ সাড়ে ছয় শতাংশ এবং এক কাঠা করা হয়। জমিদার হেম চন্দ্র রায়ের এলাকার 'তালুক' জমি প্রতি ১০ শতাংশে এক কাঠা হিসাবে পরিমাপ করা হয়।

হাম গুটি স্মৃতি সংসদের পরিচালক এবি সিদ্দিক জানান, হাম গুটি খেলে দুই জমিদারের জমি পরিমাপের বিরোধ মিটে গেছে। প্রাচীনরা প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিনে এই খেলার আয়োজন করতেন। আমরা যুগ যুগ ধরে খেলার আয়োজন করে আসছি। হাম গুটি খেলার কোনো নির্দিষ্ট সময় ও খেলোয়াড়ের সংখ্যা বা কোনো ব্যবস্থাপক নেই। তিনি দাবি করেন, খেলাটি ২৬৫ বছর ধরে চলছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে