ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

শীতকালে উষ্ণ আবহাওয়া, পুরোপুরি শীত কবে নামবে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৩ ডিসেম্বর ৩১ ১০:৪০:৫৬
শীতকালে উষ্ণ আবহাওয়া, পুরোপুরি শীত কবে নামবে

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বাসিন্দা আবু বারেক লিমন বলেন, “গত রাতে আমি হালকা সোয়েটার পরে বাজারে যাওয়ার পর এবার শীত তুলনামূলকভাবে কম।

সাধারণভাবে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের এই এলাকা শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ডিসেম্বর থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। কিন্তু এবার ডিসেম্বর শেষ, শীত এখনও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।

আজ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এটিও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, আবহাওয়াবিদরা বলছেন।

উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলায়ও একই অবস্থা। তবে চলতি মাসের শুরুতে বৃষ্টির পর কিছুটা শীত নামতে শুরু করেছে। কিন্তু অনেকে তাদের ভারী শীতের কাপড় খুলে ভিতরে রেখে দেয়।

আগামী সপ্তাহে আবহাওয়াবিদরা খুব একটা পরিবর্তন দেখছেন না। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শৈত্যপ্রবাহের কোনো সম্ভাবনা নেই তবে কুয়াশার পরিমাণ বাড়বে এবং তাপমাত্রা কিছুটা কমবে।

এল নিনোর প্রভাব

এবার এই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রয়েছে, ফলে শীতও তেমন জাঁকিয়ে বসতে পারেনি। এখনো শৈত্যপ্রবাহ বা খুব একটা ঘন কুয়াশার দেখা নেই।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান অবশ্য বলছেন এটা তাদের প্রত্যাশিতই ছিল।

“অবশ্যই এখন তাপমাত্রা যেটা থাকার কথা তার চেয়ে বেশি রয়েছে, তবে এটা অপ্রত্যাশিত নয়, আমাদের ফোরামে আমরা আগেই আলোচনা করেছি যে এবার ওয়ার্ম উইন্টার হবে।”

এই আবহাওয়াবিদ এর কারণ হিসেবে এল নিনোর প্রভাবের কথা বলছেন। আবহাওয়ায় এল নিনো সক্রিয় থাকলে মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উষ্ণতা বাড়ে। যা সামগ্রিক তাপমাত্রাও বাড়িয়ে দেয়।

“এখন স্ট্রং এল নিনো চলছে,” মি. কামরুল বলেন, “এটা থাকলে সাধারণত উপমহাদেশে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, আমরা সেটারই প্রতিফলন দেখছি।”

দেশে এখনো কোন কোন জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠছে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আর এ মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহীর বাঘা থেকে সোহাগী আক্তার বলেন, “দিন দিন শীত মনে হয় কমে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর একটু কুয়াশা নামে। তারপরও রাতে সেভাবে লেপ-কম্বল লাগে না।”

কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঠে যাচ্ছে খুব সকালেই। সে কারণেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও খুব একটা নামছে না। আর এই সময়টায় তাপমাত্রা সাধারণত উঠানামা করলেও এবার এল নিনোর প্রভাবে সেটাও দেখা যাচ্ছে না বলে জানান কামরুল হাসান।

“সাধারণত এ সময় তাপমাত্রা দশের নিচে আটের কাছাকাছি থাকার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র তেঁতুলিয়াতেই দশের নিচে নেমেছে, নয়ের এর নিচে এখনো কোথাও নামেনি।”

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে বলেই বলা হচ্ছে। তবে জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

পুরোপুরি শীত কবে নামবে?

পঞ্চগড়ে যে দুজনের সাথে কথা হয় বিবিসি বাংলার, তাদের একজন জানান কাল থেকে শীত বাড়বে এরকম খবর তারা পেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শৈত্যপ্রবাহ আসছে এরকম অনেক পোস্ট লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু আবহাওয়া অফিস বলছে আগামী অন্তত ৭ থেকে ১০ দিনে শৈত্যপ্রবাহের কোন সম্ভাবনা তারা দেখছেন না।

বাংলাদেশে সাধারণত শীত পড়ে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে। এ সময় তাপমাত্রা কমতে কমতে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছালে তখন শৈত্যপ্রবাহ চলছে বলে ধরে নেয়া হয়।

তাপমাত্রা যদি আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে সেটাকে ধরা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

তাপমাত্রা এরচেয়ে কমে ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটা হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

যেহেতু ডিসেম্বরে এখনো শৈত্যপ্রবাহ হয়নি তাই জানুয়ারিতে স্বাভাবিকভাবেই একটা শৈত্যপ্রবাহ হবে এমন প্রত্যাশা করাই যায়। কিন্তু এখনো সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলছেন আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান।

“আগামী ১০ দিনে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রিতে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের অনুভূতি বাড়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ এই সময়ে ঘন কুয়াশা আসবে।”

এই আবহাওয়াবিদ জানান এরইমধ্যে উত্তরাঞ্চলে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। আর এটা মূলত দিল্লি থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে বলে জানান তিনি।

আগামী দুই-তিন দিনে এই কুয়াশা আরও বাড়বে। আর কুয়াশা বাড়লে সূর্য উঠতেও দেরী হবে, যাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে শীতের অনুভূতি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

“শীতের সময় দুপুর বারটা থেকে তিনটার মধ্যে হয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, কিন্তু কুয়াশা যদি ১২টার আগেই কেটে যায় তাহলে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। কিন্তু যদি কুয়াশা ৩টা পর্যন্তও থাকে, তাহলে তাপমাত্রা কম থাকবে। এভাবে কুয়াশার উপর নির্ভর করেই তাপমাত্রা কমবে বা বাড়বে।”

আবু বারেক লিমন বলছিলেন, তাদের এলাকায় এখনো তেমন কুয়াশা নেই, সূর্যও সকাল আটটার পরই উঠে যায় বলে জানান তিনি।

কামরুল হাসান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এখন তাপমাত্রা এমনতিও বেড়ে যাচ্ছে। এবারে যুক্ত হয়েছে এল নিনোর প্রভাব। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তাই কমলেও, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা খুব বেশি নিচে নামার সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।

ফলে এবার শীতের প্রকোপও হয়তো খুব বেশি মারাত্মক হবে না।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে