ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চিলমারী থেকে কক্সবাজার যাওয়ার সহজ পথ

বিনোদন ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৩ নভেম্বর ২৫ ১৩:০৫:৫৩
চিলমারী থেকে কক্সবাজার যাওয়ার সহজ পথ

আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন রঙিন চশমা পড়তাম। টেকনাফ, তেঁতুলিয়া – সবকিছুই ডালভাতের মতো শোনায়, পকেটে কিছু টাকা থাকলেই। একদিন হঠাৎ একটা লেখা পড়ল, বাংলাদেশের নদীপথে কুড়িগ্রাম থেকে কক্সবাজার কিভাবে যাওয়া যায়। খুব সহজ উপায়- এই ঘাট থেকে ওই ঘাটে, প্রতিবারই নৌকা নিয়ে যেতে হবে। আমার বাড়ি বরিশাল। নদীর প্রতি ভালোবাসা জাগে। বন্ধু ফারাবীকে বললাম, ‘ল মামা যাইগা, জীবন বদলে যাবে।’ কিন্তু আজ টাকা নেই তো, কাল প্রেম নেই, পরশু সেমিস্টার ফাইনাল তো তরশু চাকরির প্যারা। তবে যেকোনো সমস্যার একটাই সম্ভাব্য সমাধান, ‘ল মামা নদীতে যাই।’ কিন্তু যাওয়া আর হয়ে ওঠে না।

গত জুনে এসে দুজনেরই মনে হলো, এবার নদীতে যাওয়া উচিত। কারণ, আমি বিলাত চলে যাব আর ফারাবীর হয়ে যেতে পারে বিয়ে। পরে দেখা যাবে বাকেট লিস্ট সিনেমার মতো এই স্বপ্ন আর কোনো দিন পূরণ হবে না। কিন্তু সমস্যা হলো ১০ দিনের ছুটি দেবে কে? বন্ধু আমার তার বসকে তেলিয়ে ছুটি নিল। আর আমি নিলাম ডেঙ্গুর বাহানা করে! সাঁতারটা কেউই খুব ভালো না পারায় লাইফজ্যাকেট কিনে আর কিছু কাপড় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ১৯ আগস্ট রাতে কল্যাণপুর থেকে বাসে রওনা দিলাম কুড়িগ্রামের পথে।

প্রায় ৪০০ মাইল জলপথ অতিক্রম করে ১২টি জেলা পরিদর্শন করার পর আমাদের যাত্রা ৭ দিনের মধ্যে শেষ হয়। কুড়িগ্রামের মুঘলবাসা ঘাটে ধরলা নদী থেকে শুরু। বগুড়ার বালাসী ঘাট, রৌমারী, রাজীবপুর, গাইবান্ধা হয়ে ব্রহ্মপুত্রের মরা কর্তোয়া তীরে। সেখান থেকে যমুনা পেরিয়ে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল। মানিকগঞ্জ থেকে চাঁদপুর যেতে চেয়েছিলাম পদ্মার কোলে। কিন্তু পদ্মার মন খারাপ। বিপদ কাটিয়ে পাটুরিয়া থেকে ঢাকায় এসে বুড়িগঙ্গার পাড়ে দাঁড়ালাম। বুড়িগঙ্গা থেকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ হয়ে ধলেশ্বরী হয়ে মেঘনার স্রোতে ভেসে পদ্মা-মেঘনার মোহনায় চাঁদপুরে যায়। সেখান থেকে ভোলা হাতিয়া দ্বীপে। সে নদী পার হয়ে নোয়াখালী চলে আসে অবিলম্বে সন্দীপের কাছে পৌঁছানোর আশায়। সেই হতাশার যন্ত্রণা ভুলতে একদিন নোয়াখালীতে থেকেছি। দুই ভাইয়ের আতিথেয়তা পেয়েছি। পরদিন সকালে তিনি আবার হাতিয়ায় ফিরে আসেন এবং সেখান থেকে এমভি তাজউদ্দীনে চড়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। আর সেখান থেকে মহেশখালীতে মাল ও লাইফজ্যাকেট নিয়ে নিজেকে সাগরে ফেলে দেয়। সেখান থেকে স্পিডবোটে কক্সবাজার।

এই নদী আজও বেঁচে আছে বাংলায়। কিন্তু এটি সম্পূর্ণরূপে শক্তির উপর ভিত্তি করে। প্রকৃতির অপার শক্তির কারণে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, মেঘনা আজও মানুষের জন্য অপরাজেয়। এরপর স্থানীয় যানজটের কারণে করতোয়া, আত্রাই, বাঙালি, লাউহজং, বুড়িগঙ্গার মতো অনেক নদী প্রাণশক্তি হারাচ্ছে। কোটি টাকা মূল্যের এই বাঁধ নদী তীরবর্তী মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিলেও প্রশাসনিক জটিলতা কেড়ে নিচ্ছে তাদের সহজ গ্রামীণ জীবন।

উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। ফেরি, স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে। বৈদ্যুতিক রিকশা হয়ে উঠেছে আরামদায়ক জীবিকার উপায়। একটা সময় ছিল যখন মাঝি 'বিদেশিদের' দেখে খুশি হতেন, কিন্তু এখন তিনি তাদের মালদহের একটি দল ছাড়া আর কিছুই মনে করেন না। খাদ্যও তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে, যা সর্বত্র লুকানোর মরিয়া প্রচেষ্টা চলছে। শুধু মিষ্টির দোকানগুলোই টিকে আছে আপনমনে। সহজ উত্তর: মানুষও টাকা রাখতে চায়। বিজয় দাসের মতো কেউ বুদ্ধিমত্তার ব্যবসা করে, সাচুব মাঝির মতো কেউ হাইকোর্টে অন্ধদের দেখায়। আর মধ্যবয়সী মৃধা সাহেব ভাবছেন কিভাবে তার ছেলে চাকরি করে টাকা উপার্জন করতে পারে।

এমনকি দক্ষিণ বাংলায়ও মানুষের জীবন খুবই অনিশ্চিত। এটা ঠিক যে কোনো সরকারি উদ্যোগ প্রচারের সঙ্গে সংবাদ তৈরি করে, কিন্তু যখন তা বন্ধ করা হয় না। রাজধানীর মানুষ যেমন পাবলিক বাসে চড়ে, তেমনি শত শত মানুষকে নিয়ে ট্রলারে নদী পারাপার করতে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় খুনি আফজাল মাস্টারকে। যে নদীতে বৃষ্টি হয়, সেখানে নবজাতক শিশুর একমাত্র ভরসা তার মায়ের ভেজা ঘোমটা। এত মানুষের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন দলের স্পিডবোটগুলো সরকারি মেরিন ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়লে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। এ কারণে নদীর তীরে অবস্থিত খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে যেমন ভারত-বিদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে, তেমনি ইনায়েতপুরের চরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত তরুণ শিক্ষক রাজীব চেষ্টা করছেন। ভালো চাকরির জন্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দিনের পর দিন ছুটি নিচ্ছে। এই ধরনের বিচিত্র মানুষের মধ্যে, আমি শুধুমাত্র একটি জিনিস সাধারণ খুঁজে পেয়েছি! কাজ নেই, কাজ নেই, বিয়ের উপযোগী দুই যুবক জলপথে দেশে যেতে চান, যেখানে বাস-অটোরিকশায় করে সব জায়গায় যেতে পারবেন! এর চেয়ে আশ্চর্যের আর কী হতে পারে?

এই কয়েকদিন বরফে পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নৌকা আটকে পড়ার আশঙ্কাও ছিল। শহুরে যান্ত্রিক গ্রামীণ চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি একটি বহনযোগ্য বাথরুম খোঁজার চ্যালেঞ্জ, যা কুড়িগ্রাম জিলা স্কুল থেকে ২০ আগস্ট সকালে শুরু হয়েছিল। সব চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী সমুদ্র সৈকতে যখন পা রাখলাম, তখন খোলা সাগরে জোয়ার-ভাটা, ঢেউ আছড়ে পড়ছিল প্রচণ্ড জোরে।

আমরা হঠাৎ একটা অদ্ভুত খেলা শুরু করলাম। নাক পর্যন্ত জলে অর্ধেক ডুবে, ঢেউ আসার অপেক্ষায়। এভাবে দাঁড়ানোর সময় তরঙ্গ

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে