ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

ব্যর্থ বিসিবির ‘৩৬ লক্ষ টাকার কোচ’

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৩ অক্টোবর ২৬ ১৭:৩৫:২৬
ব্যর্থ বিসিবির ‘৩৬ লক্ষ টাকার কোচ’

বাংলাদেশ অধিনায়কের প্রতি মানুষের মনোভাব গতকাল ভালোই অনুভূত হয়েছিল। বিশ্বকাপের মাঝপথে গতকাল দেশে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। মিরপুরে ফিরে, নাজম আবেদিন তার শৈশব প্রশিক্ষক ফাহিমের সাথে তিন ঘন্টা প্রশিক্ষণ নেন।

ফর্মে নেই সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের ৪টি ম্যাচে মাত্র ৫৬ রান করেন তিনি। নিজের লেভেলে ফেরার চেষ্টায় দেশে ফিরেছেন। স্বীকৃতির জায়গাটি কোচ ফাহিম সিদির কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে।

দলের অধিনায়কের এমন নিবেদন নিয়ে প্রশংসা হওয়া উচিত। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের প্রথম চিন্তাটাই ছিল, ‘বোধহয় কিছু শো-রুম উদ্বোধন করা বাকি ছিল!’

হাসিঠাট্টা শেষ হতেই আরেকটি প্রশ্ন মাথায় এসেছে, তাহলে এত বড় কোচিংবহর কী করছে ভারতে?

বাংলাদেশের কোচিং প্যানেল বেশ সমৃদ্ধ। পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডরমট। ইংল্যান্ডের নিক লি আছেন। কিছুদিন আগেও ব্যাটিং কনসালটেন্ট হিসেবে দলের সঙ্গে ছিলেন সাবেক কোচ জেমি সিডন্স। এর বাইরে ভিডিও অ্যানালিস্ট হিসেবে আছেন শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখর।

আর ব্যাটিংয়ের দিকটা সামলান সহকারী কোচ নিক পোথাস। মূল কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শক্তির জায়গাও কিন্তু ব্যাটিং। অস্ট্রেলিয়ায় মূলত ব্যাটিং কোচ হিসেবেই কাজ করতেন তিনি। এঁদের সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে আগে কনসালটেন্ট হিসেবে শ্রীধরন শ্রীরামকেও নিয়েছে দল। কিন্তু নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য এঁদের কাউকেই উপযুক্ত মনে করেননি সাকিব।

এরও ব্যাখ্যা আছে। সাকিব আল হাসানের মনে হচ্ছে তাঁর বেসিক নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ছোটবেলায় যাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁর কাছেই ফিরে যাওয়াটাই ভালো। ২০১৯ আইপিএলের মাঝপথেও সেটা করেছিলেন। আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে জায়গা পাচ্ছিলেন না, এর মাঝে নিজের ব্যাটিং নিয়ে শৈশবের কোচ সালাউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করেছেন। এর ফল বিশ্বকাপে পেয়েছেন, দুই সেঞ্চুরি ও পাঁচ ফিফটিতে ৬০৬ রান করেছিলেন সেবার।

এবার উল্টো কিছু দেখতে হচ্ছে সাকিবকে। সে কারণেই নজিরবিহীন এক ঘটনার জন্ম দিয়ে বিশ্বকাপের মাঝপথে দলের অধিনায়ক দেশে ফিরেছেন, টানা দুইদিন ইনডোরে অনুশীলন করেছেন কোচ ফাহিমের সঙ্গে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে নিক পোথাস, হাথুরুসিংহে বা কিছু ক্ষেত্রে শ্রীরামের কাজটা কী দলে?

সাকিব কেন মিরপুরে এসে ফাহিম স্যারের সাহায্য নিচ্ছেন, সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাইকোলজি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শৈশবে যিনি গড়ে দিয়েছেন, তিনি একটা আস্থার জায়গা; ফলে দুঃসময়ে এমন কারও কাছেই ফিরে যান অধিকাংশ ক্রিকেটার। স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকার যেতেন, বিরাট কোহলিকেও নিজের শৈশবের গুরুর পরামর্শ নিতে দেখা গেছে। আবার শৈশবের কোচও ছাত্রের মনস্তাত্ত্বিক গড়ন জানেন, তাঁর চিন্তাধারা বোঝেন, বোঝেন শরীরীভাষা, জানেন কীভাবে বললে সহজে নিজের ভুলটা শুধরে নিতে পারবে ছাত্র।

দীর্ঘদিন খেলার মধ্যে থাকলে একটা সমস্যার জন্ম হয়। সেটা হলো, ক্ষুদ্র একটা ভুল টানা করতে থাকলেও সেটা ম্যাচের উত্তেজনা ও পরিস্থিতিতে আড়ালে চলে যায়। আর বেসিক থেকে ধীরে ধীরে সরতে সরতে এমন পর্যায়ে চলে যায়, যখন সেটা আর ক্ষুদ্র ভুল থাকে না।

কিন্তু এক্ষেত্রেও প্রশ্ন ওঠে, সাকিবের ব্যাটিংয়ে এত বড় খুঁত যদি থাকে যার কারণে তাঁকে দেশে ফিরতে হচ্ছে, তবে সে খুঁতটা এত বড় হতে দিলেন কীভাবে দলের সঙ্গে থাকা কোচিংবহর? যে সমস্যা সাকিব টের পেয়েছেন, সেটা কি আরও আগেই টের পাওয়া উচিত ছিল না তাঁদের? গত মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত বাংলাদেশ। এতগুলো সিরিজ ও সেই সিরিজের আগে-পরে অনুশীলনে কখনো তাদের মনে হয়নি যে, সাকিব যেভাবে ব্যাট করছেন তাতে কিছু ‘কিন্তু’ আছে!

একজন ক্রিকেটার হয়তো ফর্মে থাকা অবস্থায় নিজের কোনোকিছু পরিবর্তন করতে চান না, কিন্তু তাঁর পায়ের অবস্থান, ব্যাট নামার অ্যাঙ্গেল, মাথার অবস্থান, পায়ের ভারসাম্য - এসব খুঁটিনাটি বিষয় দেখা, তা শুধরে দেওয়ার কাজটা তো কোচদের। সে কাজটা কি বাংলাদেশ দলের প্যানেলে কাউকে দেওয়া হয় না?

নাকি সাকিবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রচলিত মিথটাই এই সমস্যার কারণ - ‘সাকিবের অনুশীলন লাগে না!’ বিপিএলে কখনো খুব বেশি অনুশীলন না করেই পারফর্ম করতে পারেন সাকিব। গত এশিয়া কাপেও টুর্নামেন্টের মাঝপথে দেশে এসে শো-রুম উদ্বোধন করেছেন, অনুশীলন না করে ভারতের বিপক্ষে নেমে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছেন। এতেই কি সবার মাথায় ঢুকে গেছে, বেসিক নিয়ে কাজ না করলেও চলবে, অনুশীলন না করলেও চলবে, সাকিব নামবেন আর পারফর্ম করবেন!

হ্যাঁ, এতদিন হয়তো সেভাবেই করে দেখিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে এসে তো আর পারলেন না, তাই বিশ্বকাপ চলছে, এই অবস্থায় দুইদিনের ছুটিতে দল ফেলে অধিনায়ক দেশে ফিরে আলাদা অনুশীলন করার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা গেল।

সাকিব বরাবরই ব্যতিক্রম ছিলেন, তবে এতটা ব্যতিক্রমী কিছু বোধহয় না দেখলেও চলত বাংলাদেশের ক্রিকেটের।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ