ঈদের দিনে করণীয়
ঈদুল ফিতর হলো পুরস্কারের দিন। অর্থাৎ পুরস্কার বিতরণের দিন। এদিন রোজাদার এবং ইবাদতগুজার বান্দাদের আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন মূল্যবান পুরস্কার লাভ হয় যার মূল্য কত তা আখেরাতেই বুঝা সম্ভব। আমরা আল্লাহর বান্দা। আমাদের খুশি আনন্দও মাওলার খুশির অনুগত। তাই ঈদের দিনেও আল্লাহর বন্দেগি এবং রাসুল (সা.)-এর অনুকরণ-অনুসরণের অনুগত থাকা আমাদের কর্তব্য।
ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এদিনের সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া। এগুলোই মূলত ঈদের প্রাণ। এদিনের সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলগুলো হলো—
১. মিসওয়াক করা। ২. গোসল করা। ৩. নতুন কাপড় পরিধান করা উত্তম, নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা না হলে ধোয়া পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরা। ৪. সুগন্ধি লাগানো। ৫. ভোর সকালে বিছানা ছেড়ে ঈদগাহে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা। ৬. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অপর রাস্তা দিয়ে ফেরা। ৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার আগে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া কিংবা অন্য
কোনও মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার খেয়ে নেওয়া। ৮. নিচু আওয়াজে তাকবিরে তাশরিক পড়তে পড়তে যাওয়া। ৯. ঈদের নামাজ বড় খোলা মাঠে আদায় করা। তবে বড় শহর কিংবা যেখানে বেশি মানুষের বসবাস সেখানে একাধিক স্থানে ঈদের জামাত পড়া যাবে। খোলা মাঠ হওয়াও জরুরি কিছু নয়। বড় মসজিদেও চাইলে পড়া যাবে যেমনটা বর্তমানে হচ্ছে। এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো শুধু এক জায়গায় জামাত হলে বহু মানুষের ঈদের জামাত ছুটে যাবে। কারও তো বাস্তবিক কোনও অসুবিধার কারণে আবার কারও অলসতার কারণে।
ঈদের দিন সাজসজ্জা করা
ঈদের দিন ভালো পোশাক পরা, সাজসজ্জা করা, পরিপাটি হয়ে থাকা চাই। ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, আমি বিদ্বান ব্যক্তিদের থেকে শুনেছি, তারা প্রতি ঈদে আতর, সুগন্ধি ও সাজসজ্জাকে মুস্তাহাব মনে করতেন। (শরহুল বোখারি, ইবনে রজবকৃত : ৪/৪৮)
ঈদুল ফিতরে নামাজে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করা
ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেক হয়ে গেলে নেসাব পরিমাণ সম্পদ আছে এমন ব্যক্তির ওপর ফিতরা ওয়াজিব হয়। লোকজন নামাজে যাওয়া আরম্ভ করার আগেই এ ফিতরা আদায় করা উত্তম। ঈদের আগে রমজানে আদায় করলেও হবে। তবে রমজানের আগে নয়। মেয়েলোকের কেবল নিজের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব আর পুরুষদের জন্য নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের অপ্রাপ্তবয়ষ্ক সন্তানের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান ধনী হলে পিতার জিম্মায় নিজের সম্পদ থেকে আদায় করা ওয়াজিব নয়; বরং তাদের সম্পদ থেকে আদায় করা যাবে। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকেও পিতার আদায় করা ওয়াজিব নয়।
অবশ্য কোনও সন্তান পাগল হলে তার পক্ষ থেকে আদায় করে দেবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৩৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৩/৪৫২) ইসলাম দুটি কারণে এ ফিতরা আবশ্যক করেছে। একটি হলো মুসলমানদের এ আনন্দময় দিনে ফিতরার মাধ্যমে যেন সমাজের অভাবী প্রয়োজনগ্রস্ত মানুদেরও একটু ভালো খাবার ও একটু ভালো পরার ব্যবস্থা হয়। আরেকটি হলো, মুখের অসতর্কতা এবং অনর্থক কার্যকলাপের কারণে রোজার মধ্যে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে তার যেন কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়।
অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো
ঈদুল ফিতরে সবাই নতুন জামা, ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে। চতুর্দিকে মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারসহ বাহারি রকমের খাবারের আয়োজন থাকে। সবাই সাধ্যমতো কেনাকাটা করে। এক্ষেত্রে জাকাত ও নফল দান-সদকার মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে সহমর্মিতা, সদাচার ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বজায় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে ইসলাম।
আমাদের চারপাশে খুঁজলে দেখা যাবে, অনেক অভাবী অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষ যাদের খাবারের ব্যবস্থা নেই, নেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার সামর্থ্য। এমন লোকদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদেরও খাবার, কাপড়-চোপড় এবং অন্যান্য প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে আনন্দ করাই প্রকৃত ঈদ। ঈদে যে রোজাদার আপন মুমিন ভাইয়ের প্রয়োজনের প্রতি খেয়াল করল না—এরকম রোজার মাধ্যমে কিই বা উপকার লাভ করবে এবং ঈদ থেকেই বা কি উপকার লাভ করবে! বঞ্চনার কষাঘাতে জর্জরিত এসব মানুষের প্রতি অবহেলা আল্লাহর পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হতে পারে।
আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া
ঈদের আনন্দ শুধু নিজেরা না করে আত্মীয়-স্বজনকেও এতে শরিক রাখা। আত্মীয়তা অক্ষুণ্ন রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। সারাবছর এতে ত্রুটি হয়ে গেলেও অন্তত আনন্দময় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদে সবার খোঁজ-খবর নেওয়া। হালপুরসি করা। হাদিয়া নিয়ে যাওয়া। কোনও প্রয়োজন থাকলে তা পূর্ণ করার চেষ্টা করা। অন্যরা আত্মীয়তার বন্ধনে ত্রুটি করলেও নিজে সম্পর্ক জুড়ে রাখা। এটাই প্রকৃতপক্ষে আত্মীয়তা বন্ধন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ তোমার সঙ্গে যে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছে, তুমি তার সঙ্গে তা জুড়ে রাখো, তোমাকে যে বঞ্চিত করেছে, তুমি তাকে প্রদান করো এবং যে তোমার প্রতি অন্যায় আচরণ করেছে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭৪৫২)
ঈদ মোবারক বলা
ঈদের দিন মন খুলে রাখা ঈদের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। একজন আরেকজনের জন্য দোয়া করা যেন আল্লাহ সবার আমল কবুল করে নেন। একজন আরেকজনকে মোবারকবাদ দেওয়া। সালাম, মুসাফাহা, মুআনাকা না করেও কেউ চাইলে ঈদ মোবারক বা এ জাতীয় বাক্য বলতে পারে। তবে হাদিসে ঈদ মোবারক দেওয়ার জন্য যে শব্দাবলি বর্ণিত হয়েছে তা হলো, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।’ শুবা (রহ.) বলেন, ঈদের দিন আমার সঙ্গে ইউনুস ইবনে উবাইদ সাক্ষাৎ করে বললো, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা।’ (কিতাবুদ দোয়া লিত-তাবারানি : ৯২৯) সাহাবায়ে কেরামও ঈদের দিন একজন আরেকজনকে এ শব্দ দিয়েই ঈদ মোবারক বলতেন। (বায়হাকি)
সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া
ঈদের বড় একটি শিক্ষা হলো এদিন সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া। কারও প্রতি মনে হিংসা-বিদ্বেষ না রাখা। পরস্পর দেখা-সাক্ষাতের মাধ্যমে মহব্বত-ভালোবাসা বৃদ্ধি করার এটি একটি মোক্ষম সময়। কারও সঙ্গে আগে কোনও ধরনের মন কষাকষি থাকলে এদিনকে গনিমত মনে করে ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ককে আবার জুড়ে নেওয়া।
ঈদগাহে কোনও সুন্নত বা নফল নামাজ না পড়া
ঈদ আনন্দ-ফূর্তির দিন। তাইতো এদিন ফজর নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার পর থেকে ঈদের নামাজ পড়া পর্যন্ত মসজিদে, ঘরে কিংবা ঈদগাহ যেকোনও স্থানে নফল নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমি। ঈদের নামাজের পর থেকে এদিন দুপুর পর্যন্ত শুধু ঈদগাহ ও মসজিদে নফল মাকরুহ। তবে নামাজের পর ঘরে নফল পড়া যাবে। (তহতাবি আলাদ্দুররিল মুখতার : ১/৩৫৩; মারাকিল ফালাহ : ১/১২১; নুরুল ইজাহ : ১/৩৮)
ঈদের নামাজের পর মুআনাকা-মুসাফাহা না করা
ঈদের নামাজের পর অনেককে পরস্পর মুসাফাহা-মুআনাকা করতে দেখা যায়। অথচ শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসাফাহা-মুআনাকাকে ঈদের গুরুত্বপূর্ণ বিধান মনে করা মাকরুহ ও অপছন্দনীয়। ফিকহ ও ফতোয়ার গ্রহণযোগ্য গ্রন্থগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নামাজের পরে মুসাফাহার আবিস্কারকারীরা হলো রাফেজি। মহানবী (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কেও স্পষ্ট বলা হয়েছে, তারা ঈদের নামাজের পর মুসাফাহা-মুআনাকা করতেন না। মোটকথা, মুসাফাহা-মুআনাকার এ সুযোগ বের করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বাড়াবাড়ি। শরিয়তে প্রথম সাক্ষাৎ কিংবা বিদায় দেওয়ার সময় মুসাফাহা প্রমাণিত। অর্থাৎ প্রথমে সালাম ও তার উত্তর হবে তারপর হবে মুসাফাহা। নামাজের পর তা শরিয়তসিদ্ধ নয়। ঈদের সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলগুলোতে মুসাফাহা-মুআনাকা অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং সুন্নত পরিপন্থি হওয়া স্পষ্ট। সুতরাং এ প্রথা বর্জনীয়। তবে মুফতি কিফায়াতুল্লাহ (রহ.) বলেন, ঈদের আবশ্যকীয় কোনও আমল মনে না করে শুধু প্রথা হিসেবে মুসাফাহা ও কোলাকুলি করলে কোনও অসুবিধা নেই। (কিফায়াতুল মুফতি : ৩/৩০২)
ঈদের দিন রোজা না রাখা
ঈদের দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে পানাহার এবং আনন্দ করার নির্দেশ—তাই এদিন রোজা রাখা হারাম। কেউ রোজার নিয়ত করে ফেললে ভেঙে ফেলা আবশ্যক, নতুবা গুনাহ হবে। কেউ চাইলে ঈদের পরদিন রোজা রাখতে পারবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/২২৬)
অসুস্থ বিনোদন থেকে বিরত থাকা
ঈদ আনন্দের দিন। আনন্দ-বিনোদনে ইসলাম বাধা দেয় না; বরং উৎসাহ দেয়, তবে তা শরিয়তের সীমারেখার মধ্যে হতে হবে। এদিন গান-বাজনাসহ সব ধরনের অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা একান্ত কর্তব্য।
আল্লাহ তায়ালা রমজান পরেও সুস্থতার সঙ্গে সারাবছর আমাদের আমল ধরে রাখার এবং ঈদের শিক্ষা নিয়ে বাকি পুরো বছর কাটানোর তাওফিক দান করুন। ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। ভেসে যাক দুঃখ-কষ্ট ও হিংসা-বিদ্বেষ।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- IPL নিলাম ২০২৫: মুস্তাফিজ নয় রেকর্ড মুল্যে ধোনির চাওয়াতেই আইপিএলে দল পেলেন সাকিব
- আইপিএল নিলামে ঝড় তুলে ৫ কোটি রুপিতে দল পেলেন নাহিদ রানা
- IPL নিলাম: সাকিব মুস্তাফিজ নয় ইতিহাস গড়ে রেকর্ড বিডে যে দলে রিশাদ হোসেন, দেখেনিন কে কোন দলে
- IPL নিলাম: দল পেল মুস্তাফিজের দুই সতীর্থ, দেখেনিন সাকিবের অবস্থান
- চলছে আইপিএল নিলাম, এক নজরের দেখেনিন এখন পর্যন্ত দল পেলেন যারা ও সাকিব মুস্তাফিজের অবস্থান
- আইপিএল নিলামের দুই দিন আগে সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন অলরাউন্ডারদের তালিকা প্রকাশ, দেখেনিন সাকিবের অবস্থান
- ব্রেকিং নিউজ: ১০ কোটি রুপিতে দল পেলেন নাহিদ রানা, দেখেনিন সাকিব ও মুস্তাফিজের অবস্থান
- ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলো চার দল, বাদ পড়তে পারে ব্রাজিল, দেখেনিন আর্জেন্টিনার অবস্থান
- ব্রেকিং নিউজ: আকাশ ছোয়া মূল্যে দল পেলেন মুস্তাফিজের সতীর্থ, দেখেনিন নাহিদ রানার অবস্থান
- ব্রেকিং নিউজ: শেষ হলো সাকিবের নিলাম, দেখেনিন এখন পর্যন্ত দল পেলেন যারা
- IPL নিলাম: আকাশ ছোয়া মূল্যে দল পেলেন লিটনের সতীর্থ, দেখেনিন সাকিব মুস্তাফিজের অবস্থান
- ৪২ রানে অল-আউট, টেস্টে সর্বনিম্ন দলীয় রানের লজ্জার রেকর্ড
- প্রথম দিনের আইপিএল নিলাম শেষ, দেখেনিন এক নজরের দল পেলেন যারা
- মাত্র ৭ রানে অলআউট, টেস্ট ইতিহাসে লজ্জার বিশ্বরেকর্ড
- ব্রেকিং নিউজ: IPL নিলামে চমক দেখিয়ে রেকর্ড দামে দল পেলেন সাকিব