ঢাকা, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ব্রেকিং নিউজ: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বিষয়ে দূতাবাসের জরুরি নোটিশ

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৩ এপ্রিল ১৮ ১৭:৩৪:৩০
ব্রেকিং নিউজ: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বিষয়ে দূতাবাসের জরুরি নোটিশ

পরে, ২০২২ সালের ২ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহে প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপনপূর্বক ২০২২ সালের আগস্টে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়।

সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত লেবার ডিপার্টমেন্ট ৮ হাজার ৭২৭টি নিয়োগের ডিমান্ডের বিপরীতে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯২ জন বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এরই মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৫ জন নতুন কর্মী মালয়েশিয়ায় এসে পৌঁছেছে। বাকিগুলোর আগমন প্রক্রিয়াধীন।

এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক মোট পাঁচ লাখ নতুন বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হবে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন আশা করছে।

এদিকে, মালয়েশিয়ায় আসার পর কিছু সংখ্যক বিদেশি কর্মী সঠিক কাজ পাচ্ছে না বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিগত সোর্স থেকে জানা গেছে। তার মধ্যে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীও সমস্যায় পড়েছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবহিত হয়েছে।

এ বিষয়ে, হাইকমিশন নিজস্ব উদ্যোগে এবং মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কিছু সংখ্যক কর্মীদের কাজ দিতে নিয়োগকর্তাকে বাধ্য করতে সমর্থ হয়েছে, বাকি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটির বিষয়ে সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে কিছুটা আলোচনা করা প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন মনে করে। মালয়েশিয়া সরকারের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে একজন কর্মীও কর্মহীন হওয়ার কথা নয়।

কারণ, মালয়েশিয়াব্যাপী লেবার ডিপার্টমেন্টের শাখা-প্রশাখা রয়েছে। একমাত্র তারা যদি সঠিক যাচাই-বাছাই করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন অনুমোদন করেন তাহলেই বিদেশি কর্মীদের সঠিক চাকরি, কর্ম-পরিবেশ, আবাসন ও মজুরি নিশ্চিত হবে।

এছাড়াও, মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী দেশি-বিদেশি সকল কর্মীর আইনগত সকল অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্ব লেবার ডিপার্টমেন্টের ওপর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানকে সাংগঠনিক ও আইনগত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনো দেশের দূতাবাসের পক্ষেই শতভাগ যাচাই-বাছাই করে কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে, দূতাবাসকে আবশ্যিকভাবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করতে হবে। এটা বাংলাদেশসহ সকল সোর্সিং কান্ট্রির দূতাবাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ দূতাবাস আনুমানিক ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সঠিক আছে কি-না সে সংক্রান্ত কাগজ-পত্র যাচাই বাছাই করে ডিমান্ড সত্যায়ন করে থাকে। বাকি আনুমানিক ৫ শতাংশ ডিমান্ডের বিপরীতে দূতাবাস নিয়োগকর্তার অফিস/প্রজেক্ট সাইট ইত্যাদি ভিজিট করে সত্যায়ন করে থাকে। শতভাগ প্রজেক্ট /ফ্যাক্টরি তথা হাজার হাজার নিয়োগ প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে ভিজিট করা দূতাবাসের পক্ষে বাস্তবিকভাবেই অসম্ভব।

মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের পক্ষেই একমাত্র সম্ভব। তাই, মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের ছাড়পত্রের ওপর আস্থা রেখে শ্রমিক পাঠানো যুক্তিসংগত এবং অন্যান্য সকল শ্রমিক উৎস দেশ এটাই করছে।

তাছাড়া, শতভাগ প্রজেক্ট দূতাবাস থেকে ভিজিট করে ডিমান্ড সত্যায়ন করতে হলে কর্মী আগমনের গতি এতই ধীর হবে যে, যেটা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে, প্রতিযোগী দেশসমূহ সেই সুযোগ নেওয়ার কারণে বাংলাদেশ তার যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হবে।

তবে, এক্ষেত্রে ডিমান্ড সংগ্রহকারী বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ তাদের মালয়েশিয়ার সহযোগী এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগকর্তার সঠিকতা এবং বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই করার পর শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম গ্রহণ করলে শ্রমিকদের কর্মহীনতার ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে সতর্ক করেছে যাতে দূতাবাস কোনো প্রজেক্ট সাইট/কোম্পানি সরেজমিনে যাচাই করতে না যায়।

কূটনৈতিক পত্রে তারা জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার যে কোনো কোম্পানি পরিদর্শনের একমাত্র এখতিয়ার মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের। এমনকি সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সভায়ও বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে এবং কর্মী নিয়োগের ডিমান্ডের যথার্থতা নিশ্চিতের দায়িত্ব মালয়েশিয়ার সরকারের বলে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর প্রতিনিধি কর্তৃক বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনকে কোম্পানি ভিজিট থেকে বিরত থাকার জন্য পুনরায় বলা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় আসার পর কাজ না পাওয়া কর্মীর সংখ্যা মোট আগত কর্মীর তুলনায় খুবই কম এবং এটি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রেই হচ্ছে না-নেপাল, মিয়ানমারসহ অন্যান্য অনেক দেশের শ্রমিকও এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই পরিস্থিতির অবনতি না হয় সে বিষয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যাতে করে বৈধভাবে আগত একজন বাংলাদেশি কর্মীও মালয়েশিয়াতে বিড়ম্বনার শিকার না হয়।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার বাস্তবতার বিষয়টি সকল সচেতন মহল সম্যক অবহিত আছেন। মালয়েশিয়ার নতুন সরকার এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশকে অবহিত করেছে।

সম্প্রতি বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের দীর্ঘদিনের পুরোনো ব্যবস্থাপানার উন্নয়ন ও অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনাকে বাংলাদেশ হাইকমিশন সাধুবাদ জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশন এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পূর্ণ আন্তরিকতা ও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর, যাতে করে দ্রুত সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর নিরাপদ অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে।

এক্ষেত্রে, কর্মীদের স্বার্থ-সংরক্ষণের লক্ষ্যে সকল প্রকার চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় রেখে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন শ্রমিক নিয়োগের ডিমান্ড সমূহের অনুমোদনের সত্যতা এবং নিয়োগকারীর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু কোম্পানি সরেজমিনে তদন্তের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ কার্যক্রম পরিচালনায় হাইকমিশনের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রকার শিথিলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না।

এই মহৎ কার্যক্রমে বাংলাদেশ হাইকমিশন সকল সচেতন মহল এবং সকল অংশীজনের যথাযথ দায়িত্ববোধ, পূর্ণ আন্তরিকতা ও সহায়তা প্রত্যাশা করে হাইকমিশন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে