ঢাকা, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১

জুমার পূর্বে চার রাকাত সুন্নত যে কারণে পড়া জরুরি

২০২২ জুলাই ২২ ১১:২৫:৫১
জুমার পূর্বে চার রাকাত সুন্নত যে কারণে পড়া জরুরি

রাকাত সংখ্যা কত বা কেমন সুন্নাত; মুআক্কাদা নাকি মুআক্কাদা নয়, সেটা নিয়ে উলামায়ে কেরামের মাঝে মৃদু দ্বিমত থাকলেও জুমাপূর্ব নামাজ যে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম পড়তেন, এতে কোনো দ্বিমত নেই। তাছাড়া সাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত আমল ও এর প্রতি নির্দেশ প্রদান মুআক্কাদা হওয়ারই প্রমাণ বহন করে৷

আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে সুন্নাত নামাজ পড়ার বিষয়টি তো বুখারী-মুসলিমসহ প্রায় সবগুলো কিতাবের সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত৷

হাদিস শরীফে এসেছে-بَينَ كلِّ أذانينِ صلاةٌঅর্থাৎ দুই আযানের (আযান ও ইকামতের) মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ রয়েছে৷ (বুখারী হাদিস নং-৬২৭ মুসলিম হাদিস নং-৮৩৮)

আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أتَى الجُمُعَةَ، فَصَلَّى ما قُدِّرَ له، ثُمَّ أنْصَتَ حتَّى يَفْرُغَ مِن خُطْبَتِهِ، ثُمَّ يُصَلِّي معهُ، غُفِرَ له ما بيْنَهُ وبيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرَى، وفَضْلُ ثَلاثَةِ أيَّامٍ.

অর্থ: যে ব্যক্তি গোসল করে, এরপর জুমায় আসে, এরপর তাওফীক মতো নামাজ পড়ে, এরপর চুপ থাকে (ইমাম) তার খুতবা সমাপ্ত করা পর্যন্ত, এরপর তার সাথে নামাজ পড়ে, তার অন্য জুমা পর্যন্ত ও আরো তিন দিনের (গুনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়। (সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ৮৫৭)

জুমাপূর্ব চার রাকাত সুন্নাত নামাজ সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত৷ সুন্নাহসম্মত৷ এটাই অগ্রগণ্য মত৷

عن أبي عبد الرحمن السلمي رضي الله عنه قال: كان عبد الله يأمرنا أن نصلي قبل الجمعة أربعاً، وبعدها أربعاً، حتى جاءنا عليٌّ فأمرنا أن نصلي بعدها ركعتين ثم أربعاً. وجاء في آثار السنن: إسناده صحيح

অর্থ: আবু আবদুর রহমান আস-সুলামী রা. বলেন- আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাযি. আমাদেরকে জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন৷ (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হাদিস নং-৫৫২৫, সনদ সহীহ)

এই বর্ণনায় লক্ষণীয় বিষয় এই যে, খলীফায়ে রাশিদ আলী ইবনু আবী তালিব রাযি. যখন কুফায় এসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর শিক্ষা দেখলেন এবং তার আদেশ সম্পর্কে অবগত হলেন তখন তিনি কাবলাল জুমার বিষয়ে কোনো পরিবর্তন করেন নি, শুধু বা’দাল জুমা চার রাকাতের সঙ্গে আরো দুই রাকাত যোগ করার আদেশ করেছেন। ফলে পরবর্তী সময়ে ইমাম আবু ইউসুফ রাহ.সহ আরো অনেক ইমামের নিকটে, জুমার পরের সুন্নত সর্বমোট ছয় রাকাত। এ থেকেও প্রমাণিত হয় যে, আলী ইবনু আবী তালিব রাযি.-এর নিকটেও কাবলাল জুমার সুন্নত চার রাকাত৷

আলী রাযি. থেকে বর্ণিত-كان رسول الله صلى الله عليه وعلى آله وصحبه وسلم يصلي قبل الجمعة أربعاً، وبعدها أربعاً، يجعل التسليم في آخرهن ركعة.

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ এক সালামে আদায় করতেন৷ (তাবারানী: ২/১৭২)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُما، قَالَ: كَانَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعلى آلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ يَرْكَعُ قَبْلَ الجُمُعَةِ أَرْبَعًا، وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا لا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ.

অর্থ: ইবনু আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পরে চার রাকাত নামাজ এক সালামে আদায় করতেন৷ (ইবনু মাজাহ হাদিস নং-১১২৯, আবুল হাসান খালঈ এই হাদিসের সনদকে উত্তম বলেছেন৷ তারহুত-তাসরীব: ৩/৪১, ইলাউস সুনান: ৭/১০)

সাহাবায়ে কেরামের আমল-

عن ابن مسعود رضي الله عنه كان يصلي قبل الجمعة أربعاً وبعدهاঅর্থ: ইবনু মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি জুমার আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করেছেন৷ (তিরমিযী হাদিস নং-৫২৩)

عَنْ عَبْدِ الله بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي قَبْلَ الجُمُعَةِ أَرْبَعًا، لا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ بِسَلامٍ، ثُمَّ بَعْدَ الجُمُعَةِ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ أَرْبَعًا.অর্থ: ইবনু উমার রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি জুমার পূর্বে চার রাকাত নামাজ এক সালামে আদায় করেছেন৷ এরপর জুমার পরে দুই রাকাত তারপর আরো চার রাকাত আদায় করেছেন৷ (শরহু মাআনিল আসার, তাহাবী পৃষ্ঠা- ১৬৪/১৬৫, সনদ সহীহ)

عن إبراهيم قال: كانوا يصلون قبلها أربعا.অর্থ: তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন- তারা (সাহাবায়ে কেরাম) জুমার আগে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়তেন৷ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বা: ২/৪০)

হাফিয ইবনু রজব হাম্বলী রাহ. বলেন- জুমার পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়া জুমহূর উলামায়ে কেরামের মত৷ তিনি বলেন-

وقد اختلف فی الصلاة قبل الجمعة هل هی من السنن الرواتب ․․․․․ ام هی مستحبة مرغب فیها کالصلاة قبل العصر وأکثر العلماء علی أنها سنة راتبة․

অর্থাৎ মতবিরোধ হয়েছে যে, জুমার পূর্বে যে নামাজ আদায় করা হয়, তা সুন্নাতে রাতেবা (মুআক্কাদা) নাকি মুস্তাহাব যার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে৷ যেমন আসরের পূর্বের নামাজ৷ অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত হচ্ছে, জুমার পূর্বের নামাজ সুন্নাতে রাতেবা (মুআক্কাদা)৷ (ফতহুল বারী শরহুল বুখারী, ইবনু রজব: ৮/৩৩৩)

وأما السنة قبل الجمعة وبعدها فقد ذكر في الأصل: وأربع قبل الجمعة، وأربع بعدها، অর্থ: জুমার পূর্বের সুন্নাত নামাজের ব্যাপারে 'আসল' নামক কিতাবে উল্লিখিত হয়েছে যে, চার রাকাত জুমার পূর্বে ও চার রাকাত জুমার পরে আদায় করা (সুন্নাত)৷ (বাদায়েউস সানায়ি': ১/২৮৫)

আল্লামা শাওকানী রাহ. জুমাপূর্ব সুন্নাত নামাজ পড়ার সমর্থনে দুটি হাদিস উল্লেখপূর্বক তার মতামত ব্যক্ত করেছেন এভাবে-

والحديثان يدلان علي مشروعية الصلاة قبل الجمعة… والحاصل أن الصلاة قبل الجمعة مرغب فيها عموما وخصوصا.অর্থাৎ বর্ণিত দুটি হাদিস জুমার পূর্বে সুন্নাত নামাজ শরীয়তসিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ বহন করে…৷ সুতরাং জুমার পূর্বে নামাজ পড়ার বিষয়ে শরীয়তে সর্বোতভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে৷ (নাইলুল আওতার: ৩/৩০৩)

উপরোক্ত দালিলিক আলোচনা থেকে বোঝা গেলো কাবলাল জুমা তথা জুমাপূর্ব চার রাকাত সুন্নাত নামাজ সহীহ হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত৷ তাছাড়া যুক্তিও বলে, জুমার আগে চার রাকাত নামাজ পড়া উচিত৷ যেহেতু জুমাবার জুমার নামাজ হচ্ছে যুহরের নামাজের স্থলাভিষিক্ত৷ আর যুহরের পূর্বে চার রাকাত নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদা রয়েছে, তাই কাবলাল জুমা চার রাকাত নামাজও পড়ার নিয়ম থাকা উচিত৷ আর হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা সেটা সাব্যস্ত হয়ে গেলো৷

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে