ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

অবশেষে জানা গেল যে কারণে আবু ত্ব-হা আত্মগোপনে ছিলেন জানালো পুলিশ

২০২১ জুন ১৮ ১৯:২৭:২১
অবশেষে জানা গেল যে কারণে আবু ত্ব-হা আত্মগোপনে ছিলেন জানালো পুলিশ

শুক্রবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনের উপকমিশনার আবু মারুফ হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

উপকমিশনার আবু মারুফ হাসান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছি, ব্যক্তিগত কিছু কারণে তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। যেহেতু ব্যক্তিগত কারণ, তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সেটি প্রকাশ করছি না। তবে ত্ব-হা আমাদের জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরধ ঘটেনি। তারপরও আমরা সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেব।

উপকমিশনার বলেন, ঘটনার দিন, অর্থাৎ তথাকথিত নিখোঁজ হওয়ার দিন আবু ত্ব-হা গাবতলী থেকে গাইবান্ধা চলে যান। সেখানেই এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। শুক্রবার তিনি রংপুরে আবহাওয়া অফিস মাস্টারপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আসেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তিনি আমাদের হেফাজতেই আছেন।

গত ১০ জুন থেকে আবু ত্ব-হা, তার দুই সঙ্গী আব্দুল মুহিত ও মোহাম্মদ ফিরোজ এবং গাড়িচালক আমির উদ্দিনের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানিয়েছিল তাদের পরিবার। শুক্রবার জানা যায়, ত্ব-হা তার রংপুরের বাড়িতে ফিরেছেন। দুপুরে তাকে রংপুরে আবহাওয়া অফিস মাস্টারপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে দেখা যায়। এরপর তাকে প্রথমে রংপুর কোতোয়ালি থানা ও পরে রংপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

উপকমিশনার ব্রিফিংয়ে বলেন, তিনি শ্বশুরবাড়িতে আছেন জানার পর আমরা তাকে নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার সঙ্গী আমির উদ্দিনের সন্ধান আমরা পেয়েছি, তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আরেক সঙ্গী আব্দুল মুহিত, তার বাড়ি মিঠাপুকুরের জায়গীরহাট এলাকায়।

তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। চতুর্থ যে ব্যক্তি মোহাম্মদ ফিরোজ, তার বাড়ি বগুড়ায়। সেখানেও সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাকেও সংশ্লিষ্ট থানা নিয়ে আসবে। সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা জানিয়ে উপকমিশনার বলেন, আমাদের যে আইনি প্রক্রিয়া, আমরা সেটি অনুসরণ করব। নিয়ম অনুযায়ী তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে তারা যে বক্তব্য বা জবানবন্দি দেবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবু ত্ব-হা’কে তার রংপুর নগরীর আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন মাস্টার পাড়ায় শ্বশুর আজহারুল ইসলাম মণ্ডলের বাড়িতে ঢুকতে দেখেন প্রতিবেশীরা। পরে সেখান থেকে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তাকে নেওয়া হয় কোতোয়ালি থানায়।

পরে সেখান থকে তাকে নেওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। এরপর আর পুলিশ গণমাধ্যমের কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। যোগাযোগ করলে জানানো হয়, পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।

ত্ব-হা’র পরিবারের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ জুন দিবাগত রাত থেকে কোনো খোঁজ মিলছিল না আবু ত্ব-হা ও তার তিন সঙ্গীর। সেদিন তারা রংপুর থেকে ঢাকার পথে রওনা দেন। রাত ২টার দিকে সবশেষ তার স্ত্রী সাবিকুন্নাহারের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। এরপর থেকেই তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শেষে তাকে না পেয়ে ১১ জুন বিকেলে রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন ত্ব-হা’র মা আজেদা বেগম।

এর মধ্যে, ত্ব-হাসহ নিখোঁজ চার জনের সন্ধান চেয়ে বুধবার (১৬ জুন) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন ত্ব-হা’র স্ত্রী সাবিকুন্নাহার।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ত্ব-হা ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। এ নিয়ে তিনি কথা বলতেন। এজন্য বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে। অবিলম্বে তার স্বামীসহ সফরসঙ্গীদের সন্ধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপও কামনা করেন সাবিকুন্নাহার।

এর আগে স্বামীকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছিলেন বলে জানান সাবিকুন্নাহার। পরে একই বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১৫ জুন) বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বরাবরও দু’টি চিঠি দেন তিনি।

জানা যায়, আবু ত্ব-হা’র বাড়ি রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ এলাকায়। রংপুর কারমাইকেল কলেজে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরে বাড়ির পাশে আল জামেয়া আসসালাফিয়া মাদরাসাতেও তিনি পড়ালেখা করেন। অনলাইনে আরবি পড়াতেন। ইসলাম নিয়ে অনলাইন-অফলাইনে বক্তৃতা করতেন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে