ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ব্রেকিং নিউজ : আলোচিত ধর্মীয় বক্তা মুফতি আমির হামজা গ্রেপ্তার

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২১ মে ২৪ ২১:৩৫:৫৩
ব্রেকিং নিউজ : আলোচিত ধর্মীয় বক্তা মুফতি আমির হামজা গ্রেপ্তার

মুফতি আমির হামজা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের রিয়াজ সর্দারের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসীর পরিষদের কেন্দ্রিয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সোমবার (২৪ মে) বিকেল চারটার দিকে কুষ্টিয়ার সদরের ডাবিরাভিটা গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে হামজাকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

আমির হামজার স্ত্রী তামান্না সুলতানা বলেন, সাদাপোশাকে ছয়–সাতজন মানুষ এসে হাতকড়া পরিয়ে হুজুরকে (আমির হামজা) নিয়ে যায়। এ সময় তাদের একজনের কাছে রাইফেল ছিল।

তামান্না সুলতানা ভাষ্যমতে, গতকাল রোববার তারা পরিবারসহ গ্রামের বাড়ি ডাবিরাভিটা যান। আজ দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়িতেই শুয়ে ছিলেন তার স্বামী আমির হামজা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হঠাৎ একটি কালো মাইক্রোবাস বাড়ির সামনে আসে। ছয়-সাতজন নেমে ঘরের ভেতরে যায়। একপর্যায়ে হুজুরকে ডাকতে বলে এবং তাদের সঙ্গে যেতে বলে। তিনি বের হলে তাঁর হাতে একজন হাতকড়া পরিয়ে ফেলে।

আমির হামজার স্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রত্যেকের শরীরে পাঞ্জাবি ও পাজামা পরা ছিল। তবে হাতকড়া পরানোর সময় কয়েকজন কালো কটি পরে। তাদের মধ্যে একজনের হাতে রাইফেল ছিল। ১০ মিনিটের মধ্যে তারা কালো গাড়িতে (হাইয়েস) করে দ্রুত চলে যায়। এরপর শহরের কয়েক জায়গায় যোগাযোগ করে এখনো তার কোনো সন্ধান পাচ্ছি না।’

পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম-সিটিটিসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পরে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, ওয়াজে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে সাম্প্রতিক একটি মামলায় আমির হামজাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার বিস্তারিত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হবে।’

কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজকারী আমির হামজার জন্ম ১৯৯১ সালে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে আল-কোরআনের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি। আমির হামজা যখন ওয়াজ শুরু করেন, তখন তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন, ‘আমি ভার্সিটির মাল’।

তবে ওয়াজিয়দের একাংশ আবার এ নিয়ে তাকে আক্রমণ করার পর তিনি আর সে পরিচয় দেননি।

গত ৫ মে তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টারত সাকিব নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাকিবকে আটকের পর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সাকিবসহ আলী হাসান উসামা ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীকে আসামি করা হয়।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, সাকিবের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘সাকিব মোবাইল ফোনে উগ্রবাদ বার্তা সংবলিত ভিডিও প্রচারকারী আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহার প্রমুখ ব্যক্তির উগ্রবাদী জিহাদি হামলার বার্তা সংবলিত ভিডিও দেখে উগ্রবাদে আসক্ত হয়।’

ওই এজাহারে মুফতি আমির হামজার নাম ছিল। তার সূত্রে ধরেই তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটিটিসি সূত্র।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মোজাম্মেল হক স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, রোববার বিকালে মুফতি আমির হামজা বাড়িতে আসেন। এরপর সোমবার বিকালে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

স্থানীয় যুবক মো. রাকিব জানিয়েছেন, ব্রিজের ওপর মাইক্রোবাসটি এসে থামে। এরপর একজন অপরিচিত লোক বাড়ি দেখিয়ে দেন। পরে দেখলাম আমির হামজাকে ধরে নিয়ে গেল।

আমির হামজা পালিয়ে আছেন বলে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হচ্ছিলো। তবে তিনি বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমি চোর নয় যে পালিয়ে বেড়াবো।’

গত বছর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর আমির হামজা ক্রমাগতভাবে মাস্ক না পরতে উৎসাহ দিয়ে আসছিলেন। বলেছেন, করোনা এসেছে ইসলামে অবিশ্বাসীদের শায়েস্তা করতে। তিনি এমনও বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কারও করোনা হবে না।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায় আমির হামজা বলেন, ‘আমি কসম দিচ্ছি আপনার কাছে করোনা আসবে না। যদি আসে আমার কাছ থেকে বুঝে নিয়েন যান। যদি আসে তাহলে কোরআন শরিফ মিথ্যা হয়ে যাবে। আল্লাহ কি তার কোরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করবেন?’

এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলে হামজা তার মতো করে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, এই বক্তব্যের আগে পরে তিনি আরও অনেক কিছু বলেছেন। সেগুলো প্রচার না হওয়ায় তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে