ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কিছুই হলো না বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ ডিসেম্বর ২০ ০০:৫৩:২৩
কিছুই হলো না বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের

সংসার চালানোর চিন্তায় অস্থির কাজল শুনেছিলেন প্রবাসী ঋণের কথা। পরিকল্পনা করেন বাজারে দোকান দেওয়ার। খোঁজখবর করে কাজল জানতে পারেন তিনি ঋণের জন্য যোগ্য নন। ফলে এখনো অন্ধকারে কাজলের ভবিষ্যৎ। লালমনিরহাটের দুলাল ফিরতে বাধ্য হয়েছেন দীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ থেকে। দালালের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা খরচ করে মাত্র ছয় মাস মালদ্বীপে থাকতে পেরেছিলেন।

দুলাল জানান, মালদ্বীপ গিয়ে কাজ না পেয়ে ঘুরতে হয়েছে প্রায় এক মাস। এর মধ্যে করোনা মহামারী শুরু হলে কাজ বন্ধ। গত মে মাসে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশে। বসতভিটার বড় অংশ বিক্রি করে ঋণ শোধ করেছেন দুলাল। মোবাইলে প্রবাসী বন্ধুদের কাছ থেকে প্রবাসী ঋণের কথা জানতে পারেন। কিন্তু দুলালের অভিযোগ, ব্যাংক ও জনশক্তি অফিসে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য পাননি।

শুধু কাজল বা দুলালের নন, করোনা মহামারীর মধ্যে সারা বিশ্বের সাধারণ বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকার পরও দেশে ফেরা সোয়া ৩ লাখ বাংলাদেশির প্রায় সবারই একই অবস্থা। এদেশের বেশির ভাগই সহায় সম্বল হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। কেউ মহামারীর কারণে কর্মহীন কিংবা চাকরির চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দেশে ফিরে এসেছেন।

এ ছাড়া কেউ কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে বা সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরত এসেছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, করোনা মহামারীর কারণে চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ফিরে এসেছেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন প্রবাসী। ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত শ্রমিকদের পুনর্বাসনে সরকার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৪৩ জন প্রবাসী এই ঋণ পেয়েছেন। ৭০০ কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ হয়েছে মাত্র ১৮ কোটি টাকা।

এ নিয়ে অভিবাসন দিবসে প্রবাসীকল্যাণ সচিব মুনিরুছ সালেহীন জানান, প্রথম দিকে ঋণ পাওয়ার শর্ত নিয়ে কিছু সংশয় ছিল। শাখা অফিসগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। আশা করছি গত ছয় মাসের তুলনায় আগামী ছয় মাসে ঋণ নেওয়ার সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে। আগের চেয়ে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে ৫ হাজার টাকা নিতে বিদেশ ফেরতরা যতটা না আগ্রহ দেখান প্রবাসী ঋণ নিতে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।

জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর অভিবাসী কর্মীদের পুনর্বাসন ঋণ নীতিমালার সংশোধনী প্রকাশ করা হয়। এতে চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীরা ঋণ আবেদন করতে পারবেন বলে বলা হয়েছে। আগের নীতিমালায় প্রবাসীর বহির্গমন ও আগমনের সিলসহ পাসপোর্টের ফটোকপি ও বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার নথি উপস্থাপন করতে হতো। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণ পেতে প্রবাসীরা ট্রাভেল পাসের ফটোকপি জমা দিতে পারবেন।

এ ছাড়া এই ঋণের নীতিমালা অনুযায়ী, এক ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক। সরল সুদের এই ঋণের মেয়াদ হবে খাত অনুযায়ী এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। তবে যে কোনো পরিমাণ ঋণের ক্ষেত্রে প্রকল্প, ব্যবসার মালামাল বা অস্থাবর ও অন্যান্য সম্পদ প্রাথমিক জামানত হিসেবে দায়বদ্ধ থাকবে ব্যাংকের কাছে।

ফেরত যাওয়ার সংখ্যায় ভাটা : বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের কারণে যারা বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন করোনাভাইরাসের লকডাউনের মধ্যে তারাও দেশ ছাড়তে পারেননি। এমন অবস্থায় আগে যেখানে প্রতিবছর ৭ থেকে ৮ লাখ শ্রমিক বিদেশে পাঠানো হতো,

সেখানে চলতি বছর বিদেশে পাড়ি জমাতে পেরেছে ১ লাখ ৯০ হাজারের মতো মানুষ, যাদের ৯৬% গেছে প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে। এর মধ্যে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত লকডাউনের কারণে একজনকেও পাঠানো যায়নি। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে গেছে মাত্র ৮ হাজার অভিবাসী।

৪০ হাজার নারী কর্মী নিঃস্ব : বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বমসা) জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের মহামারীকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪০ হাজার নারী কর্মী (গৃহকর্মী) ফিরেছেন। যাদের মধ্যে শুধু সৌদি আরব থেকেই ফিরেছেন ১৭ হাজার ৩০০ জন। এদের অধিকাংশই ফিরেছেন খালি হাতে। কিংবা বেতনের চেয়ে কম নিয়ে।

অনেকে আবার নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরেছেন। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পরিচালক অ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, কাজ না থাকা, চুক্তি বা আকামার মেয়াদ না বাড়ানো, অবৈধ হয়ে পড়া এবং অনেকেই কারাভোগ শেষে আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন।

স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে প্রবাসীদের দেশে ফেরার হার পাঁচ গুণেরও বেশি। দেশে ফিরে এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফেরত আসা প্রবাসীদের ৭০ শতাংশই জীবিকা সংকটে রয়েছেন। ৫৫ শতাংশ বলছেন তাদের ওপর ঋণের বোঝা রয়েছে। ২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনে নারী অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি উল্লেখ করে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, গন্তব্য দেশে নারী অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

মূল সমস্যা হলো, নারী শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়া। সচেতনতা এবং অজ্ঞতার কারণে দালাল বা প্রতারকের পাল্লায় পড়ে কিশোরী মেয়েরা অভিবাসনের নামে পাচার হয়ে যায় এবং কেউ কেউ লাশ হয়ে ফেরত আসে। ২০১৮ সালের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড অ্যাক্টের ৯(খ) ধারা অনুযায়ী প্রত্যাগত নারী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আলাদা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে নারী অভিবাসী ও তাদের পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানায় বমসা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে