ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১

৬ মাস সাগরে ‘জিম্মি’ থেকে অবশেষে ৩০০ রোহিঙ্গার ঠাঁই হলো ইন্দোনেশিয়ায়

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ সেপ্টেম্বর ০৭ ১৭:৩৮:২১
৬ মাস সাগরে ‘জিম্মি’ থেকে অবশেষে ৩০০ রোহিঙ্গার ঠাঁই হলো ইন্দোনেশিয়ায়

ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রান দ্বীপপুঞ্জের সর্ব-উত্তরে অবস্থিত উজং ব্লাং গ্রামের প্রধান মুনির কাট আলী জানান, রোহিঙ্গাদের ওই দলটিতে বেশিভাগই নারী এবং শিশু। সোমবার সকালে তাদের সাগরে দেখতে পান স্থানীয়রা। এরপর তারাই রোহিঙ্গা দলটিকে লোকসুমাওয়ে এলাকায় নামতে সাহায্য করেন।

ওই অঞ্চলের সেনাপ্রধান রনি মাহেন্দ্র জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানো রোহিঙ্গা দলটির মধ্যে ১৮১ জন নারী, ১০২ জন পুরুষ এবং ১৪ শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত একজনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এসব রোহিঙ্গা ঠিক কতদিন ধরে সাগরে ভাসছিলেন এবং কোন ধরনের নৌযানে ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটিতে এযাবৎকালে পৌঁছানো সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা দল এটাই।

এদিকে, ইন্দোনেশিয়ার ভূমিতে নামতে দিয়ে রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক ইন্দ্রিকা রাতওয়াত্তে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ২০০ দিনেরও বেশি সময় সাগারে কাটানো রোহিঙ্গা দলটি বারবার তীরে নামার চেষ্টা করার পরেও সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। যাত্রাপথে এসব শরণার্থীর মধ্যে কয়েক ডজনের প্রাণহানি হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সমুদ্রপথে শরণার্থীদের নিরাপদে ও সুবিধাজনক উপায়ে নামার অনুমতি না দিলে তার ভয়াবহ পরিণতির বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছে ইউএনএইচসিআর-সহ অন্যরা। শেষ পর্যন্ত গত ছয় মাসের নিষ্ক্রিয়তার ফলাফল হয়েছে মারাত্মক।’

মুক্তিপণ দাবিআল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানো রোহিঙ্গা দলটি চলতি বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের একটি শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করেছিল। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা।

তবে মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গাদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দু’টি দেশই গত কয়েক মাস ধরে তাদের সীমান্ত বন্ধ রেখেছে। এসব দেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়ের লোভ দেখিয়ে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকে পাচারকারীরা।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা আরাকান প্রোজেক্টের পরিচালক ক্রিস লেওয়া বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর পাচারকারীরা রোহিঙ্গা দলটিকে বেশ কয়েকটি নৌকায় ছোট ছোট দলে ভাগ করে। এর মধ্যে কয়েকটি নৌকা গত জুন মাসে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছাতে পেরেছিল। বাকিগুলো আরও কয়েকশ’ দিন সাগরেই কাটিয়েছে। সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের পরিবারের কাছে অর্থও দাবি করছিল পাচারকারীরা।

লেওয়া বলেন, ‘পাচারকারীরা তাদের (রোহিঙ্গা) তীরে নামাতে চাচ্ছিল না, কারণ সবাই অর্থ দেয়নি। তাদের মূলত নৌকায় জিম্মি করে রাখা হয়েছিল।’

গত জুনে ইন্দোনেশিয়ার এই একই এলাকায় পৌঁছেছিল অন্তত ১০০ রোহিঙ্গার একটি দল। তারা প্রায় চার মাস সাগরে কাটানোর পর তীরে পৌঁছান। এ দলটিতেও বেশিরভাগ ছিলেন নারী ও শিশু। সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাচারকারীদের হাতে ব্যাপক মারধরের শিকার হন তারা। এমনকি বেঁচে থাকতে নিজেদের মূত্র পান করতে বাধ্য করা হয়েছিল এসব ভুক্তভোগীকে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে