ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

বিপদে পড়া প্রবাসীদের জন্য বিশাল সুখবর, ১০ কোটি টাকার সহায়তায় পাঠানো হবে দেশে দেশে

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ আগস্ট ২১ ২১:১৭:২৪
বিপদে পড়া প্রবাসীদের জন্য বিশাল সুখবর, ১০ কোটি টাকার সহায়তায় পাঠানো হবে দেশে দেশে

তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সাড়া হিসেবে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় মানবিক সহায়তার জন্য।

বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত ৯ কোটি ৭৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের ৩৩টি মিশনে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এই অর্থ বিভিন্ন মিশনে পাঠায়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা হিসেবে সৌদি আরবের রিয়াদ দূতাবাসে এক কোটি টাকা দেওয়া হয়। প্রথম ধাপে ৪০ লাখ, দ্বিতীয় ধাপে ৩০ লাখ এবং তৃতীয় ধাপে ৩০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। একইভাবে জেদ্দা কনস্যুলেটকেও ৩ ধাপে এক কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।

এছাড়া আবুধাবিতে দুই ধাপে ৫০ লাখ, দুবাইতে দুই ধাপে ৫০ লাখ, কুয়েতে দুই ধাপে ৪৫ লাখ টাকা, কাতারে দুই ধাপে ৩৫ লাখ, ওমানে দুই ধাপে ৭ লাখ, জর্ডানে দুই ধাপে ৫০ লাখ, ব্রুনাইয়ের দারুস সালামে এক ধাপে শুধু ২৫ লাখ টাকা, গ্রিসে এক ধাপে ২০ লাখ টাকা…

লিবিয়ায় ১০ লাখ টাকা, মালদ্বীপে দুই ধাপে ৩৫ লাখ টাকা, মালয়েশিয়ায় দুই ধাপে ৮০ লাখ টাকা, বাহরাইনে দুই ধাপে ৫০ লাখ টাকা, ইতালির রোমে ২৫ লাখ টাকা, মিলানে ১০ লাখ টাকা, ইরাকে দুই ধাপে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, স্পেনে দুই ধাপে ২৫ লাখ টাকা, হংকংয়ে ১০ লাখ টাকা…

লেবাননে দুই ধাপে ২৭ লাখ টাকা, ফ্রান্সে ২০ লাখ টাকা, থাইল্যান্ডে ৮ লাখ টাকা, পর্তুগালে দুই ধাপে ২০ লাখ টাকা, সিঙ্গাপুরে ৩০ লাখ টাকা, ব্রাজিলে ১০ লাখ টাকা, রাশিয়ায় ৫ লাখ টাকা, মরক্কোতে ৫ লাখ টাকা, মরিশাসে ৫ লাখ টাকা, জাপানে ৫ লাখ টাকা, ইরানে ৫ লাখ টাকা, মিসরে ১০ লাখ টাকা, অস্ট্রেলিয়ার ফিজিতে ২০ লাখ এবং ভিয়েতনামে ৫ লাখ টাকা পাঠানো হয়।

কয়েকটি দূতাবাসে কথা বলে জানা গেছে, বরাদ্দ টাকা করোনার কারণে সংকটে পড়ে প্রবাসীদের মানবিক সহায়তা হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহে ব্যয় করা হয়। তাছাড়া কোনও কোনও দূতাবাস থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ গিফট ভাউচার হিসেবেও দেওয়া হয়, যাতে প্রবাসীরা সেটি ব্যবহার করে নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন।

স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে কথা বলে জানা যায়, স্পেনে প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগেরই পর্যটননির্ভর ছোট ব্যবসা, দিনমজুরি ইত্যাদি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনার কারণে সে দেশের সরকার ঘোষিত লকডাউনের ফলে এদের অধিকাংশই আয় রোজগার বঞ্চিত হয়ে সপরিবারে দুর্বিষহ অবস্থায় দিনযাপন করছিল।

“স্থানীয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন এবং সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্থা প্রায় দুই হাজার অসহায় ব্যক্তিকে শনাক্ত করে চাল, ডাল, তেলসহ অতি প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের কার্যক্রম শুরু করে প্রথম দিকে। এরপর গত ২৩ মার্চ দূতাবাসের প্রথম সচিব মুহাম্মদ মুতাসিমুল ইসলাম মানবিক সহায়তার আবেদন করে একটি চিঠি পাঠান ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর।”

“চিঠিতে তিনি লেখেন, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত পরিস্থিতির কারণে থেকে যাওয়া বাজেটের খাতে জরুরি ভিত্তিতে আরও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলে প্রাথমিকভাবে প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সাহায্য প্রদান করা সহজ হবে।”

দূতাবাসের আবেদনে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড এবং দ্বিতীয় ধাপে চাহিদা অনুযায়ী আরও ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এছাড়া ইতালির রোমে বাংলাদেশ মিশনে কথা বলে জানা গেছে, মানবিক সহায়তার জন্য ৬০০ প্রবাসী আবেদন করেছিলেন। বরাদ্দের টাকা দিয়ে তাদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে ফুড ভাউচার দেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবের রিয়াদ দূতাবাসে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের মানবিক সহায়তা হিসেবে এক হাজার ফুড বাস্কেট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় পাঁচ হাজার প্রবাসীর জন্য ১০০ রিয়ালের কুপনের ব্যবস্থা করেছে দূতাবাস। ওই কুপন দিয়ে শপিং মল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ব্যবস্থা ছিল। পাশাপাশি সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে দুই হাজার ফুড বাস্কেট দেওয়া হয় দূতাবাসকে বিতরণের জন্য।

এ প্রসঙ্গে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বরাদ্দের টাকা দিয়ে আমরা খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল সৌদি সরকারের তরফ থেকে। আর প্রবাসীদের জন্য স্থানীয় বাংলাদেশি চিকিৎসকদের দিয়ে কল সেন্টারের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের দেওয়া ২৫ লাখ টাকা সে দেশের ২৭ হাজার ৪৭ ইউরো সমমানের। মাদ্রিদ থেকে ৪৭৭ এবং বার্সেলোনা থেকে ৩৯৮ জনের আবেদন পায় দূতাবাস। পাশাপাশি অন্যান্য শহর থেকে আরও ১৫০ জনের আবেদন পাওয়া যায়। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় দূতাবাসের কর্মচারীরা নিজেদের থেকে আরও প্রায় সাড়ে ৯০০ ইউরো তহবিলে দান করেন। তাতে প্রায় ২৮ হাজার ইউরো তহবিলে জমা হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে তহবিলের মোট অর্থ সমানভাবে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দূতাবাস।

প্রবাসীদের মানবিক সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত ছিল যে বিদেশের কোনও মিশন থেকে গুরুতর আবেদন এলে সেটা যেন নিশ্চিত করা হয়। ইতালি, স্পেনের মতো অনেক দেশেই অনেক প্রবাসী আছেন যারা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন। দূতাবাসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে