ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

এক অতৃপ্তি নিয়ে দল থেকে অবসর নিচ্ছেন ফুটবলার মামুনুল ইসলাম

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ আগস্ট ১১ ১৭:৫০:৪০
এক অতৃপ্তি নিয়ে দল থেকে অবসর নিচ্ছেন ফুটবলার মামুনুল ইসলাম

২০০৭ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম লাল-সবুজ জার্সি পড়েছিলেন এ প্লে-মেকার। পরের বছরই প্রথমবারের মতো খেলেন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে।

শিরোপা উদ্ধারের স্বপ্ন নিয়ে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা যাওয়া ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন মামুনুল ইসলাম। কিন্তু বাংলাদেশ বাদ পড়েছিল গ্রুপপর্ব থেকে। তারপর হওয়া পাঁচটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেই বাংলাদেশ দলে ছিলেন মামুনুল ইসলাম। কিন্তু একবারও সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এর মধ্যে ২০০৯ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালের আসর বসেছিল বাংলাদেশেই।

প্রায় ১৩ বছর জাতীয় দলে খেলা মামুনুল ইসলাম বাংলাদেশের ফুটবলের পরিচিত মুখ। দেশের বড় বড় ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। এমন কি ২০১৪ সালে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ চ্যাম্পিয়ন 'অ্যাথটিকো দ্য কলকাতা' দলের সদস্যও ছিলেন। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলে ১৮টা ট্রফি আছে তার। তারপরও বড় এক অতৃপ্তি নিয়েই জাতীয় ফুটবল থেকে অবসর নিচ্ছেন দেশের অভিজ্ঞ এ ফুটবলার। সেটা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জিততে না পারা।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৮০টির মতো ম্যাচ খেলেছেন। লাল-সবুজ জার্সি তুলে রাখার জন্য মামুনুল বেছে নিয়েছেন আগামী ১২ নভেম্বর ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ। এরপর যতদিন পারবেন ঘরোয়া ফুটবল খেলে যাওয়ার ইচ্ছে।

আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশের দুটি ম্যাচ আছে আফগানিস্তান ও কাতারের বিরুদ্ধে। নভেম্বরের দুই ম্যাচ ভারত ও ওমানের বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচকেই কেন বেছে নিলেন অবসরের জন্য?

‘আসলে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই অন্যরকম আকর্ষণ, অন্যরকম আবেগ। সব সময়ই এ দুই দলের খেলা হয় ফিফটি ফিফটি। কেবল বাংলাদেশ ও ভারতের দর্শকদেরই নয়, এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর ফুটবলপ্রেমীদের দৃষ্টি থাকে এই ম্যাচে। পরে আবার কবে ভারতের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাবো তার তো ঠিক নেই। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১২ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পরই অবসর নেব জাতীয় দল থেকে’-গাজীপুরের সারা রিসোর্ট থেকে বলছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক।

ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলে বিদায় নিতে হলে মূল স্কোয়াডে টিকতে হবে এবং ওই ম্যাচেও জায়গা করে নিতে হবে- সেটা মামুনুলও ভালো করে জানেন। তিনি বলেন, ‘১৪ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলে এখন অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন আমার লক্ষ্য সুস্থ থাকা এবং ফিট থেকে ওই ম্যাচের জন্য দলে জায়গা করে নেয়া। তা না হলে তো ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে অবসরের ইচ্ছা পূরণ হবে না।’

জাতীয় দলের হয়ে খেলা বিশাল এক সম্মানের উল্লেখ করে মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘ফুটবলার মামুনুল ইসলামকে দেশের সবাই চেনে, এটাই সবচেয়ে গৌরবের। ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের প্লাটফর্ম তৈরি করে দিতে হবে বলেই অবসরের সিদ্ধান্ত। কারণ, আমার চেয়েও অনেক ভালো খেলোয়াড় জাতীয় দলে আছেন। আমার পজিশনেও আছেন। তবে সবাইকে নিজের জায়গাটা তৈরি করে নিতে হবে।’

ফুটবলার হিসেবে অনেক পাওয়ার পরও মামুনুল ইসলামের অতৃপ্তি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। আক্ষেপভরা কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। টানা ৬টি সাফ খেলেছি। এই অতৃপ্তিটাই আমার রয়ে গেল জাতীয় দল থেকে অবসরের আগে।’

২০১১ সালে নেপালের বিরুদ্ধে একটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে প্রথম অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পড়েছিলেন। সর্বশেষ অধিনায়কত্ব করেছিলেন ২০১৬ সালে থিম্পুতে ভুটানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হেরে যাওয়ার ম্যাচে।

ঘরোয়া ফুটবলে ২০০৫ সালে ব্রাদার্সকে চ্যাম্পিয়ন করানোর মধ্যে দিয়ে শিরোপা জয়ের স্বাদ পাওয়া শুরু হয়েছিল মামুনুলের। এর পর তিনি আবাহনীর হয়ে একটি ফেডারেশন কাপ, একটি প্রিমিয়ার লিগ, মোহামেডানের হয়ে একটি ফেডারেশন কাপ ও একটি সুপার কাপ জিতেছেন।

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের হয়ে ট্রেবল জিতেছেন, শেখ জামালের হয়ে তিনটি প্রিমিয়ার লিগ দুটি করে ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ, চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে স্বাধীনতা কাপ জিতেছেন।

২০১০ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ঢাকা এসএ গেমস ফুটবলে স্বর্ণ জিতেছেন এবং ২০১৪ সালে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন 'অ্যাথলেটিকো দ্য কলকাতা' দলের সদস্য ছিলেন। অনেক অতৃপ্তির মধ্যে প্রাপ্তিও তো কম নয়!

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ