ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সদ্য সংবাদ

সৌদিতে প্রবাসীদের জন্য চরম দু:সংবাদ : চোখের পানি ফেলছে প্রবাসীরা

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ জুলাই ২০ ২১:৩১:২২
সৌদিতে প্রবাসীদের জন্য চরম দু:সংবাদ : চোখের পানি ফেলছে প্রবাসীরা

তিনি আশা করছেন, দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়তো তাকে এ ত্রিশঙ্কু দশা থেকে মুক্তির সুযোগ করে দিতে পারে।করোনা সংক্রমণের কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যাপক প্রস্থান দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু সৌদি আরবে কয়েক লাখ অবৈধ শ্রমিক না কোনো কাজ করতে পারছেন, না পারছেন দেশে ফিরে যেতে।

তাছাড়া এক রকম ‘ফাঁদে’ আটকা পড়া এসব শ্রমিকের কারণে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলার ক্ষেত্রেও। আদতে সৌদি আরবে বিদেশী শ্রমিকদের এ দুর্দশার মূলে রয়েছে স্পন্সর বা ‘কাফালা’ পদ্ধতি।পদ্ধতিটিকে দাস প্রথার আধুনিক রূপ বলে অভিহিত করেছেন সমালোচকরা। কারণ এর মধ্য দিয়ে শ্রমিকরা কার্যত তাদের সৌদি নিয়োগকর্তার নির্দেশানুগত হয়ে থাকতে বাধ্য হন।সৌদিতে প্রবেশ, বহির্গমন ও চাকরি বদলের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার কাছ থেকেই নিতে হয় অনুমতি।

তাছাড়া কোনো শ্রমিকের বৈধতা কিংবা অবৈধতা নির্ধারণেও সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তা যথেষ্ট প্রভাব রাখেন। আর এ সুযোগেই শ্রমিকদের কাছ থেকে তারা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন।শ্রম অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন, সৌদি আরবে এমনিতেই শ্রমিকদের ওপর পদ্ধতিগতভাবে অন্যায় করা হয়। তাদের আবাসনগুলো খুবই জনাকীর্ণ। একই সঙ্গে তারা তাদের চাকরিদাতাদের দ্বারা শোষণের শিকার হন। আর এর মূলে রয়েছে সৌদি আরবের বিতর্কিত শ্রমনীতি। দীর্ঘ সময় ধরেই সৌদি কর্তৃপক্ষকে তাদের এ নীতি পুনর্গঠনের পাশাপাশি দেশটিতে আটকে পড়া নিরুপায় ঋণগ্রস্ত দরিদ্র শ্রমিকদের ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

মূলত সৌদি আরবে প্রায় এক কোটি প্রবাসী শ্রমিক কাজ করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটির কর্তৃপক্ষ লাখো অবৈধ শ্রমিককে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু এদের অনেকেই রয়েছে হাতেমের মতো, যারা ঋণে জর্জরিত ও উপার্জনহীন। তারা তাদের দেনা শোধ করার আগ পর্যন্ত দেশে ফেরার অনুমতি পাচ্ছেন না। অন্যদিকে কাফালা পদ্ধতি তাদের উপার্জনের পথও বন্ধ করে রেখেছে।

৪৫ বছর বয়সী হাতেম এখন সৌদিতে অবৈধ শ্রমিক হিসেবে পরিগণিত। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তিনি রিয়াদে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। হাতেম বলেন, সুদানে তার বৃদ্ধা মা ও বোন রয়েছে। তারা বর্তমানে খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু সত্যি বলতে রিয়াদে বর্তমানে তার অবস্থা আরো খারাপ। ২০১৬ সালে সৌদিতে আসা হাতেমের মতে, কাফালা একটি অন্যায় পদ্ধতি।

এ অবস্থায় অ্যাডভোকেসি গ্রুপ মাইগ্রেন্ট রাইটসের গবেষণা সহযোগী আন্নাস শাকের বলেন, এখন সৌদি সরকারের উচিত সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে অনিয়মিত শ্রমিকদের নিয়মিত করা কিংবা তাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া। এ ধরনের শ্রমিকদের জোর করে আটকে রাখার মানে হলো তারা পালিয়ে বেড়াবেন। ফলে সৌদি কর্তৃপক্ষের জন্য করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রক্রিয়া আরো জটিল হয়ে উঠবে।

এরই মধ্যে সৌদি আরবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দুই হাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৃতদের মধ্যে দেশটির চিকিৎসক ও নার্সও রয়েছেন, দিন দিন এদের সংখ্যা বাড়ছে বৈ কমছে না। অন্যদিকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেও আর রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অনেকেই দেশটিতে করোনা সংক্রমণের এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছে প্রবাসী কমিউনিটিকে।

মার্চে সৌদি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছিল যে অবৈধ শ্রমিকদের বিনা মূল্যে করোনার চিকিৎসা দেয়া হবে। একই সঙ্গে তারা আত্মপ্রকাশ করলে তাদেরকে কোনো শাস্তি দেয়া হবে না। কিন্তু বহু বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও রূঢ় আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের এ প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখতে পারছেন না। বেশ কয়েকজন অবৈধ শ্রমিক জানিয়েছেন, তারা করোনায় আক্রান্ত হলেও সামনে আসবেন না। ৩৬ বছর বয়সী মিসরীয় জানান, তিনি অনেক ঋণ করে সৌদিতে এসেছেন। এ অবস্থায় তিনি কোনোভাবেই গ্রেফতার হওয়ার মতো ঝুঁকি নিতে পারেন না।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে