ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় ছাড় নেই বৈধ প্রবাসীদেরও, চলছে হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্ক

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ জুলাই ১৫ ১৬:৫৬:২৩
মালয়েশিয়ায় ছাড় নেই বৈধ প্রবাসীদেরও, চলছে হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্ক

যার ফলে দেশটিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা এক রকম অবরুদ্ধ। অন্যদিকে হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযান।আর এসব অভিযানে আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাশাপাশি হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে বৈধদেরও।

অভিযান চলছে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। আর কাগজপত্রে সামান্য ত্রুটি পেলেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট।জানা গেছে, সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি রায়হান কবির কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় সাক্ষাত্কার দেয়ার পর থেকেই অভিযান বাড়িয়ে দিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

“এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ রায়হান কবিরের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করেছে। তাকে গ্রেফতারে বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় চলছে অভিযান। এসব অভিযানে রায়হানকে না পেলেও আটক করা হচ্ছে আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের।”

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মালয়েশিয়া প্রবাসী একাধিক বাংলাদেশি মুদি দোকান ব্যবসায়ী গতকাল প্রবাসমেইল-কে বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে লকডাউন কিছুটা শিথিল করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে একই সময় থেকে অভিযান শুরু হয়েছে বিদেশীদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে, যা করোনার এ দুর্যোগকালে কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশি অভিযান চলছে। এরই মধ্যে আটক হয়েছেন অনেকেই। আকস্মিক এ অভিযানে প্রবাসী ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।এদিকে মালয়েশিয়ান পুলিশের মহাপরিদর্শক আবদুল হামিন বদর সোমবার জানিয়েছেন, বাংলাদেশি নাগরিক রায়হান কবিরের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। তাই তাকে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার আগে অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে। এরই মধ্যে রায়হান কবিরকে মালয়েশিয়ায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড নাগরিক’ চিহ্নিত করে ধরিয়ে দিতে ইমিগ্রেশনের ফেসবুক পেজে ছবি ও পাসপোর্ট দিয়ে তাদের দেশের নাগরিকদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এখনো পুলিশ বা ইমিগ্রেশন তাকে আটক করতে পারেনি।

বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন, যাদের বড় অংশই শ্রমিক। অনেকেই আবার ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত। এর আগে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ লকডাউন শেষে গত ৪ মে থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মুদি দোকান খোলার অনুমতি দেয় মালয়েশিয়া সরকার। এরপর থেকেই শুরু হয় বিদেশীদের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অভিযান। আর এতেই বিপাকে পড়েন অন্যের লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসা কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি।

মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই দুর্দশা চলছে। সবচেয়ে সংকটে পড়েছেন অবৈধরা। কারণ বেশির ভাগ অবৈধ শ্রমিক বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মার্কেটে কাজ করতেন। সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠানেই অভিযান ও ধরপাকড় চলছে।গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আত্মগোপন করেছেন। আর্থিক দুরবস্থায় কর্মহীন দিন কাটছে প্রবাসীদের।

এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধের পর আগামী ১৭ জুলাই থেকে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস। তবে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে আপাতত বাংলাদেশ থেকে ট্রানজিট যাত্রী, মালয়েশিয়ার নাগরিক, যারা মালয়েশিয়ার নাগরিক বিয়ে করেছেন, যারা সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করেছেন এবং স্টুডেন্টস ও প্রফেশনাল ভিসায় যারা আছেন, তারাই শুধু ভ্রমণ করতে পারবেন। প্রত্যেক যাত্রীকেই ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে কভিড-১৯-এর সনদ নিতে হবে।

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় এক লাখ কর্মী। ২০১৮ সালেও দেশটিতে গেছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন কর্মী। ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি কর্মী নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর দেশটিতে গেছেন মাত্র ৫৪৫ জন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে