ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার উল্টো পথে বাজেট

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ জুন ২২ ১৫:৩৭:০৫
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার উল্টো পথে বাজেট

জাতীয় নীতি-নির্ধারণীর জায়গাতে প্রধানমন্ত্রী বলছেন এক কথা আর তার সঙ্গে যারা বাজেট তৈরি করছেন, তারা হাঁটছেন অন্য পথে। এমনই মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার (২২ জুন) তামাকপণ্যের ব্যবহার কার্যকরভাবে হ্রাস করতে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের বিশ্লেষণ এবং চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তামাক কর ও মূল্যবৃদ্ধির দাবিসমূহ তুলে ধরতে ২০টি তামাকবিরোধী সংগঠন ‘অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া ২০২০-২১’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এই অনলাইন আয়োজনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, টিভি টুডে’র এডিটর ইন চিফ সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সরকারি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর প্রমুখ।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বাজেটে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে কিছুটা কর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু যেদিন বাজেট পাস হবে সেদিন হয়তো সচেতনভাবে সেটাও কমিয়ে দেয়া হবে। (তবে) সেটা আমরা এখনো জানি না। কারণ তামাক কোম্পানিগুলো খুবই ক্ষমতাবান।’

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা অনেকেই ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির বোর্ডে থাকেন। বোর্ডে থাকলে তামাক কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করা এক ধরনের অঙ্গীকার হয়ে যায়। এটা আমরা লক্ষ্য করেছি। এর আগে এ বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা যেত। গত দুই বছরতো কথাই বলা যাচ্ছে না।’

কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, ‘উন্নয়নের দর্শন যদি মানুষ হয় তাহলে তার স্বাস্থ্য রক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এগুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু উন্নয়নের দর্শন হয়ে গেছে বাজার অর্থনীতি। সুতরাং পুঁজি যেখানে আছে অর্থ যেখান থেকে আসে সেদিকেই সরকারের নজর বেশি থাকে। তামাক কোম্পানিগুলোর অনেক পুঁজি আছে। সুতরাং বাজার অর্থনীতিতে তারাই বেশি শক্তিশালী।’

তিনি আরও বলেন, ‘তামাক করের বিষয়ে আমরা যা বলি তার পুরো উল্টা হয়ে যায়। (তামাক পণ্যে) কর বাড়ালে রাজস্ব বাড়ে স্বাস্থ্যে ক্ষতি কমে-এটা আমরা বারবার বলেছি, প্রমাণ করেছি। কিন্তু এ বিষয়টা কখনো একটু হয়তো আগাই তবে অন্যান্য সূচকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোই না। ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত দেশ করার জন্য তা একেবারেই অপ্রতুল।’

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে বলেছেন ২০৪০ সালের মধ্যে আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ব। যুদ্ধের নেত্রী কৌশল ঠিক করে দিয়েছেন যে, আমরা ২০৪০ সালে বিজয়ী হব। কিন্তু তার সহযোগীরা এ লক্ষ্য অর্জনে ধারাবাহিকভাবে এগোচ্ছে না। ২০১৬ সালের পরের বাজেটগুলো তামাক বিষয়ে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তাতে করে আমরা কোনোদিনও ২০৪০ সালে (বাংলাদেশ) তামাকমুক্ত করতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় নীতি-নির্ধারণীর জায়গাতে প্রধানমন্ত্রী বলছেন এক কথা আর তার সঙ্গে যারা বাজেট তৈরি করেন, বিড়ি-সিগারেটের পক্ষে বিবৃতি দেন, তামাক-টোব্যাকো খাতে বিনিয়োগ আনার জন্য তৎপর হন, তাদের চলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কাজেই আমরা যদি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে চাই তাহলে প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।’

সিনিয়র এ সংবাদিক আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেট প্রস্তাব করে বলেছেন, বাজেটে টাকা কোথা থেকে আসবে জানি না। আগে খরচ করব পরে আয় করব। মানুষকে রক্ষা করার জন্যই এবারের বাজেট দেয়া হয়েছে। তবে আমি মনে করি, আপনি (অর্থমন্ত্রী) মানুষকে রক্ষা করার বাজেট দেননি। কারণ প্রায় সাড়ে তিন কোটি প্রত্যক্ষ ধূমপায়ী, সাড়ে চার কোটির মতো পরোক্ষ ধূমপায়ীদের জীবন রক্ষার জন্য বাজেটে কিছু করেননি। তাহলে কোন জীবন রক্ষার জন্য এ বাজেট? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকে কর বাড়ানোর বিষয়ে আমি একমত। তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত আইনগুলোকে আরও কঠোরভাবে বস্তাবয়ন করতে হবে। এছাড়া তামাকের ক্ষেত্রে যেসব জরিমানার বিধান রয়েছে সেগুলোর পরিমাণ খুবই কম। জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে